• সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য শিবপুর আসনে হাতপাখার প্রার্থী চূড়ান্ত নরসিংদীতে সাংবাদিকের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা সরকারী নলকূপের জন্য আবেদন করা ৪৭ জনের টাকা জমা দেননি তাপসী রাবেয়া শিবপুরে ছেলের হাতে প্রাণ গেল মা’র শিবপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির নতুন কমিটি গঠন নরসিংদীতে মে দিবসে পরিবহন খাতে প্রযুক্তি নির্ভর পরিবর্তনের আহ্বান আইয়ুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার দাযিত্ব পেলেন স্বপন চন্দ্র সরদার শিবপুরে বিএনপির সকল কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হবে — মনজুর এলাহী নরসিংদীতে যুবদল নেতার বাড়িতে মিলল পল্লী বিদ্যুতের চুরি হওয়া তার বিএনপি নেতা আবু ছালেক রিকাবদারের রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

শিবপুর সংবাদদাতা.

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে শিবপুরের ৭টি গ্রাম ও ফসলি জমি

admin / ৪২০ Time View
Update : রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ও মাছিমপুর ইউনিয়নের আনুমানিক চল্লিশটি স্পট থেকে প্রায় ২৫ বছর ধরে অবাধে ফসলি জমি খনন করে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় মির্জাকান্দী, চন্ডিবর্দী, দত্তেরগাঁও এবং চৌঘরিয়া গ্রামসহ কমপক্ষে ৫-৭ টি গ্রাম যে কোন সময় পাশবর্তী শীতলক্ষ্যা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

ফসলের তুলনায় বালুতে লাভ বেশি হওয়ার কারণে এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রথমে তারা তাদের নিজেদের পুকুর থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পুকুরের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী অন্যের ফসলি জমি ভেঙ্গে চলে আসে পুকুরে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাকে নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি ক্রয় করে নিয়ে যান এ সিন্ডিকেট। আবার কারও কারও জমি জবরদখল করে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা নালিশ করে কোথাও সুবিচার পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

উপজেলার দুলালপুর বিলপাড়, দুলালপুর দড়িপাড়া, শিমুলতলা, দত্তেরগাঁও, মির্জাকান্দী, চন্ডিবর্দী এবং চৌঘরিয় গ্রামের অনেকগুলো পুকুরে স্যালু মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে এলাকার ইবরাহীম, ইসহাক, মোর্শেদ, আরিফুল ইসলাম মুন্না, জাকির হোসেন, রাজু, কবির হোসেন, আব্দুর রহমান এবং কলিমউদ্দিন ভূঁইয়াসহ প্রভাবশালী মহল।

অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে তাদের বাহিনীর কাছে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এ ছাড়া বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। আগে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোট পরিচালিত করে দু’চারটে সেলো মেশিন জব্দ এবং পুড়িয়ে দিলেও প্রায় এক বছর যাবৎ কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় না। আগে বালু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলন করতো দিনের বেলা, এখন করে রাতের বেলায়।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে এবং শেষ করে সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে।
শিবপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে ৭টি গ্রাম ফসলি জমি সরেজমিন শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও গ্রামে দেখা যায়, সাইফুল ফকির নামে এক বালু ব্যবসায়ী বাড়ির পাশে ফসলি জমি খনন করে স্যালু মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। রাতে তিনি ওই জমি থেকে বালু উত্তোলন করেন। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক বালু নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়। কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বালুর ব্যবসা করার জন্য তিনি কৃষি জমি কিনে নেন। এখানে তিনি প্রায় তিন বছর ধরে বালু উত্তোলন করছেন। এদিকে তার এই বালু উত্তোলনের কারণে আশপাশের বাড়িঘর ও ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত নুরুল ইসলাম নামে এক কৃষক সাইফুল ফকিরের বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রশাসন এর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নুরুল ইসলাম জানান, সাইফুল ফকির দীর্ঘদিন তার ফসলি জমির পাশে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে তার জমি ভাঙন দেখা দিয়েছে। জমির অনেক অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। নুরুল ইসলাম বলেন, সাইফুলের বালু বন্ধের জন্য অনেকবার বলা হয়েছে; কিন্তু সে বালু তোলা বন্ধ করছে না। নিরুপায় হয়ে গত ১৪ নভেম্বর বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শরণাপন্ন হই। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দেই; কিন্তু কোনো প্রদক্ষেপ পাইনি। এ ছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরও অভিযোগ দেই। পরে বাধ্য হয়ে গত ২০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। জেলা প্রশাসক ইউএনওকে ব্যবস্থা নিতে বললেও তিনি এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি।

দত্তেরগাঁও গ্রামের কামাল হোসেন নামে এক কৃষক জানান, সাইফুল ফকির এলাকায় কিছু সন্ত্রাসী দিয়ে ভয় দেখিয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলনের কারণে অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকেই অল্প দামে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা তার বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বাধা দিতে গিয়ে অনেকবার হামলার শিকার হয়েছি। ছয় মাস আগে বালু উত্তোলনের কারণে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছাড়া পেয়ে তিনি আবারো বালু উত্তোলন করছেন।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের দুলালপুর দড়িপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে দানা মিয়া। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত তার ১৮ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছিল। দানা মিয়ার সে ১৮ শতাংশ জমি কেড়ে নিল স্থানীয় কয়েকজন অবৈধ বালু ব্যবসায়ী।

ষাটোর্ধ্ব বয়সের দানা মিয়া এখন অটো রিক্সা চালিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। তার স্বপ্ন কেড়ে নেওয়াকারীদের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে কোথাও সুবিচার পায়নি সে। দানা মিয়া স্থানীয়ভাবে বিচার না পেয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক এবং শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর কয়েক দফা আবেদন করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।তারপরও প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন দানা মিয়া।

দানা মিয়ার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় মৃত আবদুল বারেকের ছেলে মো. রবি, ইনু মিয়ার ছেলে শরিফ এবং বশির উদ্দিনের ছেলে সরোয়ার দানা মিয়ার পাশের জমি থেকে মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোন করে তা বিক্রি করে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে।তাদের জমি থেকে বালু উত্তোলন করতে করতে প্রায় ৩০ ফুট গর্ত করে ফেলেছে। ফলে গত তিন চার বছর যাবৎ দানা মিয়ার ১৮ শতাংশ ফসিল জমি ভাঙতে শুরু করেছে। বর্তমানে সবটুকু জমি তাদের বালু উত্তোলনকৃত গর্তে বিলীন হয়ে গেছে।
তাই দানা মিয়া এখন আর ওই জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।তাই সে বৃদ্ধ বয়সেও বর্তমানে কোন উপায়ন্তর না দেখে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রবির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি অন্য কারও জমি থেকে বালু উত্তোলন করিনা, আমার জমি থেকেই বালু উত্তোলন করি।’

উল্লেখ্য যে, দুলালপুর এবং মাছিমপুর এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের ভয়ে দিনে বালুর মেশিন না চালিয়ে রাতের বেলায় চালানও হয়। উক্ত এলাকায় ২৮টি মেশিনে বালু উত্তোলন করা হয় রাত আটটার পর থেকে সকাল পর্যন্ত। এরমধ্যে প্রশাসনের একটি অংশ এবং সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করার নাম করে এলাকার চৌঘরিয়া গ্রামের ইবরাহীমের ছেলে নাজমুল প্রতিটি মেশিন থেকে দুই হাজার টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে নাজমুলের সাথে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সে নিজে বালু উত্তোলন করেন বলে স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জিনিয়া জিনাতের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category