• মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

জীবন যেন পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু — নূরুদ্দীন দরজী

admin / ৪১ Time View
Update : রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫


নূরুদ্দীন দরজী♦

গত ১২ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানে কাওছার খানের সাথে ছিলাম। কথা হয়েছিলো ২১’ ডিসেম্বর আবার দেখা হবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। কিন্তু না, তা আর হয়ে উঠলো না। হঠাৎ ব্রেইন স্টোক করে হসপিটালাইস্ট হলো সে। ৪ দিন পর হসপিটাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো। দেখতে গেলাম। শুয়ে থাকা গুরুতর বেদনাদায়ে অসুস্থ বন্ধুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেই। তার ডান হাত ও পা অবস। বাম হাতে আমার হাত শক্তভাবে ধরেলো সে। আমাদের দুজনের চোখেই অশ্রুসজল। হাত ছাড়তে চাচ্ছিলো না। অস্পষ্ট স্বরে কি যেন বলতে চাইলো, যার কিছুই বুঝতে পারলাম না। মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি ভরসা রেখে শান্তনা দিয়ে বললাম’ ” সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।, কিন্তু না, অবস্থার অবনতি হতে হতে আবার হসপিটালে নিত হয়ে ১ জানুয়ারি চলে গেলো ক্ষণস্থায়ী জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে। রাত ৯. ১০ টায় কবরে রেখে এলাম। বার বার মনে বাজচ্ছে , সেদিন শক্তভাবে আমার হাত ধরে হয়তো বলতে চেয়েছিলো,’ বন্ধু আমি আর বাচঁবো না, আর দেখা হবে না, ক্ষমা করো, দোয়া করো এমন সব কথা। অবুঝ হৃদয় আজ কেঁদে কেঁদে বলে,’ হে বন্ধু! দোয়া করি, সুখে থেকো পরবাসের অন্ধ কবরে।, এ দুনিয়ায় আর দেখা হবে না। পাবো না আর তোমাকে পথের বাঁকে, হাঁটে ঘাটে, খেলার মাঠে, কোন অনুষ্ঠানে কিংবা মঞ্চে। রাজনীতি নিয়ে দিবে না তুমি অকাট্য যুক্তি, করবে না তর্কাতর্কি। কিন্তু আশা ছাড়বো না বন্ধু! আশায় থাকবো,দেখা হবে, দেখা হবে চম্পা নদীর তীরে করুনাময়ের করুনায় ভরে রোজ হাশরে।
কাওছার দত্তের গাঁও তথা শিবপুর উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ও খান্দানী পরিবারের সন্তান। পিতা মরহুম মজনু খান, বড় ভাই আলী আহমদ খান, আদরে ভাগিনেয় এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও অতিরিক্ত পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) মোঃ এনামুল হক খান। পিতৃব্য/ চাচা,মাছিমপুর ইউনিয়নে সর্বকালের জনপ্রিয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও এলাকার শ্রদ্ধেয় জন ছিলেন মরহুম মাহতাব‌ উদ্দিন খান। পিতামহ/দাদা ছিলেন জমিদার এস্টেটের সনামধন্য নায়েব ও ব্রিটিশ আমলের ইউনিয়ন বোর্ড দাপটে প্রেসিডেন্ট আবদুল গফুর খান। গফুর খানের পিতার নাম হিম্মত খান। অবশ্য তিন পুরুষ যাবত‌ই তারা এলাকায় বেশি পরিচিত- যার তৃতীয় পুরুষ একজন কাওছার খানের অবসানে তিনটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। কাওছার খান মেয়ে ইকরাত জাহান খান অমি,ছেলে হাসান আল জামি খান এবং সহধর্মিণী ইসরাত জাহান খান জ্যোতিকে রেখে গেছেন। তার শ্বশুর ছিলেন বশির উদ্দিন খান,এক নামে রানীর বাপ।
এক সাথে পড়াশোনা করেছি। সে আমার বন্ধু ও সহপাঠি। শৈশব ও কৌশোরে পড়াশোনার পাশাপাশি ছিলো সংস্কৃতি মনা,দাপিয়ে ফুটবল খেলতো কাওছার । তার পায়ে বল এলে দর্শকদের প্রচুর আনন্দ হলে ও প্রতিপক্ষের জন্য ছিলো অশনিসংকেত। আমরা বন্ধুরা কাওছার আছে বলেই বিভিন্ন জায়গায় খেলা কন্টাক্ট করতাম। অনেক জায়গা থেকে বিজয়ী হয়ে ট্রফি নিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরে আসার স্মৃতিগুলো এখন খুব মনে পড়ছে।


এর‌ই মাঝে স্মাতক ডিগ্ৰী অর্জন করে অফিসার পদে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলো। এক পর্যায়ে চাকরি থেকে চলে আসে। নিজেদের সবকিছু দেখাশোনা করা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মানুষ বলতো সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি। অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করতো। সুন্দর, সাবলিল, শ্রোতা/ দর্শক মুগ্ধ বক্তব্য রাখতো। তার বক্তৃতায় ছিলো উপমা, অনুপ্রাস,অলংকার, যুক্তি ও সুন্দর উদাহরণের সংমিশ্রণ। সঠিক শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠনের বক্তব্যে বোদ্ধারা বিশেষভাবে উপকৃত হতো। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর/২৪ তারিখে ডিকে কিন্ডার গার্টেনে দেওয়া বক্তব্য আমার মনে পড়ে এবং পড়বে বহুদিন। এটিই ছিলো বন্ধুটির সাথে আমার শেষ অনুষ্ঠান। পরে একদিন তার অসুস্থ অবস্থায় বাকহীন নয়নে নয়ন রেখে দেখা হয়েছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে শেষ দেখায় কবরে মাটি দেই অশ্রুধারায়।
জীবনের শেষ দিকে এসে কাওছার খুবই বিমর্ষ থাকতো। যেন আমাদের সাথে অভিমান করে আছে। জানি না কী অপরাধ আমাদের। আমরাতো মানুষ ভালো মন্দের সংমিশ্রণে। ধরণীর এ পান্থ শালায় মানুষ আসে আবার চলে যায় সময়ের স্রোতে ভেসে। মহাবিশ্ব এবং এর সৃষ্টির বিশালতার তুলনায় পৃথিবীতে এ মানুষের জীবনের ব্যাপ্তি অতি নগণ্য। কাওছার চলে গেছে। আমরাও থাকবো না। একদিন সব সুর, সব ছন্দ, সব গল্প শেষ হয়ে যাবে। তারপর ও সামান্য যা কদিন থাকি, থাকতে হবে বেদনাবিধুর। বয়ে বেড়াতে হবে কাওছার খানের মত আপনজন ও প্রিয়জন হারানোর শোকগাঁথা। পরিশেষে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা কর শেষ করছি।

লেখক : সাবেক শিক্ষা অফিসার। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category