• মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২২ অপরাহ্ন

বিএনপি নেতা মনজুর এলাহীর বিরুদ্ধে যতসব অভিযোগ

admin / ৭৯ Time View
Update : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব সংবাদদাতা:::

এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জেলা বিএনপি’র মধ্যে আধিপত্য, পদ বানিজ্য, দ্বন্দ্ব-কোন্দল, সহিংসতা সহ আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্কের অভিযোগ।

একসময় ছিলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা। নরসিংদী সরকারি কলেজে ছাত্রসমাজ থেকে ছাত্র সংসদে ভিপি নির্বাচন করে গোটা ত্রিশ ভোট পেয়েছিলেন। পরে জাতীয় পার্টির জেলার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারিও হন। তিতাস গ্যাসের বকেয়া বিলের জরিমানা মওকুফ করার বাসনায় বিএনপির ততকালীন মহাসচিব মরহুম আব্দুল মান্নান ভূইয়ার হাত ধরে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে।

বিএনপি’র রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসা মনজুরের এলাহী সব কান্ডে বিব্রত এখন খোদ বিএনপি। একাধিকবার গণমাধ্যমে বিতর্কিত সব কর্মকাণ্ডের প্রধান শিরোনাম হলেও বিতর্কের মধ্যে থাকা দলের এই নেতার বিরুদ্ধে নিরব ভূমিকায় দলের নীতিনির্ধারকরা।

সর্বশেষ, গত ২৮ আগস্ট গণমাধ্যমগুলোর খবরের শিরোনামে হয়েছে নরসিংদীর আদালতে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের নামে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ শিক্ষার্থী হত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে করা মামলা কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই প্রত্যাহারের বিষয়টি। সূত্রের দাবী, মনজুর এলাহীর হুমকিতেই সেই মামলা প্রত্যাহার করে বাদী পক্ষ।

মামলা প্রত্যাহারের ঘটনায় নিয়ে ভয়ভীতি ও মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে মামলার বাদী আরিফ আহমেদ। তিনি জানান, মামলা দায়েরের পর আমি অনেকটা আত্মগোপনে চলে যাই। কিন্তু পনেরো থেকে ষোল জন অপরিচিত লোক আমাকে খুঁজে বের করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আমাকে জোরকরে আদালতে উপস্থিত করে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। একই সাথে সেসময় আদালতে নরসিংদী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মনজুর এলাহীর উপস্থিত থাকা এবং নিরবতার বিষয়টিও জানান। কিন্তু এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চায়নি মামলার বাদী।

মামলা প্রত্যাহারের ঘটনায় নরসিংদীতে আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় মনজুর এলাহীর আদালতে উপস্থিত থেকে বাদীকে জোরপূর্বক ভীতি প্রদর্শনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে। এবং মমলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করে দ্রুত আদালত চত্বর ত্যাগ করতে দেখা গেছে। এই ঘটনাট আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা যায়।

মনজুর এলাহী ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ পুরো সময়টায় দেশের বাহিরে অবস্থান করেছে। আন্দোলন চলাকালীন গত ১৬ জুলাই দেশত্যাগ করেন এবং শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ই আগস্ট দেশে ফিরেন বলে জানা গেছে। সরকার বিরোধী চলমান বিগত সময়ের আন্দোলনেও নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় দলের এই নেতাকে।

গত ৫ই আগস্টের পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসায়িদের নিকট চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৮ আগস্ট বিভিন্ন ব্যবসায়িদের নিকট পাঠানো একটি তালিকাও ছাড়িয়ে পড়ে। সেই তালিকায় মনজুর এলাহীর স্বাক্ষরও দেখা যায়। ব্যবসায়িদের সাথে এই চাঁদাবাজির বিষয়ে সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অনেক নেতাকর্মীই মনে করেন, মনজুর এলাহী নরসিংদীতে সহিংসতা ও ভয়ের রাজনীতি তৈরি করেছে। যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এসময় নরসিংদী বিএনপির রাজনীতি ঢেলে নতুন ভাবে সাজানোর বিষয়ে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মনজুর এলাহীকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী শাসনকালে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ২০২৩ এর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ পেলে মনজুর এলাহীর ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দেখা যায় রাষ্ট্রপতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।

মনজুর এলাহীর ভাই আব্দুলাহ আল মামুনের রাষ্ট্রপতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও মনজুর এলাহীর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতার বিষয়টি দলের মধ্যে তৈরি করেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (নরসিংদী সদর) ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল অব. নজরুল ইসলাম হিরুর সাথে সখ্যতা রয়েছে বিএনপি’র এই নেতার। কিন্তু মনজুর এলাহীর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি দলের কোন নেতাকর্মী।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (নরসিংদী সদর) ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল অব. নজরুল ইসলাম হিরুর সাথে মনজুর এলাহী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুবিধা ভোগী আমানত শাহ গ্রুপের কর্ণধার হেলাল মিয়ার নরসিংদীতে হাউজিং স্টেট ব্যবসার ব্যবসায়িক পার্টনার মনজুর এলাহী। যার সাথে রয়েছে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। এছাড়াও, আবেদ টেক্সটাইলের কর্ণধার মনজুর এলাহীর ছোট ভাই মামুন দুই বার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে ভারত সফর ও জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলো। এবং আওয়ামী লীগ এর সময়কালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই বার নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে।

অপরদিকে জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও মনজুর এলাহীর মধ্যে দীর্ঘদিন দলের ভেতরে চলা স্নায়ুবিক লড়াই প্রকাশ্যে রূপ নেয় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি অনুমোদনকে কেন্দ্র করে।

এছাড়াও খায়রুল কবীর খোকন একচেটিয়াভাবে এ কমিটি বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠে। জেলা বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে পদবঞ্চিত মঞ্জুর এলাহীর অনুসারী ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ মে প্রতিপক্ষের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম।

এ হত্যাকান্ডের পর বিএনপি’র হাইকমান্ড অনেকটাই ক্ষুব্ধ হয়। একটি সূত্রে জানা যায় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ ঘটনায় অসন্তোষ হয়েছেন। তবে তখন এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক কোন শক্ত ভূমিকা দেখা যায়নি। দুই ছাত্রদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় এক নম্বর আসামি খায়রুল কবীর খোকন ও তাঁর স্ত্রী বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানাকে দুই নম্বর আসামি করে ৪০ নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়েছিলো।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খোকনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রদল একাংশের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা বিএনপির মনজুর এলাহীসহ কয়েকজন নেতার ইন্ধনে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমর্থন পেয়ে খায়রুল কবীর খোকনের বাড়িতে একের পর এক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। অথচ ভাঙচুরের ঘটনায় খোকনের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলাও নেওয়া হয়নি।

হত্যাকান্ড সহ সে সময়ে থানায় মামলা না নেয়ার বিষয়ে খায়রুল কবির খোকন দেশবার্তাকে বলেন, ‘যেহতু চলমান আন্দোলন সংগ্রামে আমি রাজপথে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছি, নির্যাতিত হয়েছি, সহস্রাধিক মামলার আসামি করা হয়েছে আমাকে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি ব্যাপক ভোটে জয় লাভ করবো; তাই রাজনৈতিক ভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category