অণুগল্প : লজ্জা
নূরুল ইসলাম নূরচান
বাড়িটি কিছুক্ষণ আগেও সরব ছিল। পুলিশ আসার পর সবাই যার যার মত করে চলে গেলো। হয়তো তাদের মধ্যে কোন শঙ্কা কাজ করেছিল। কি জানি, যদি কোন ঝুটঝামেলায় পড়তে হয়? কেউ কোন ঝুট ঝামেলায় পড়তে রাজি নয়। তাই যে যার মত চলে গেছেন।
দরজা ভেঙ্গে ঘরে পুলিশ ঢুকে দেখতে পেলেন, স্টীল-কাঠের মিশ্রণে তৈরি করা খাটের ওপর পাশাপাশি দুটি নিথর দেহ পড়ে আছে। একটি ছেলে। অন্যটি মেয়ে। ছেলের বয়স ১০, মেয়ের ১৪ । তাদের শরীরে কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ‘তাহলে তারা মরলো কিভাবে?’ পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল তার সহকারীকে। সহকারী জবাব দিল, ‘স্যার ময়নাতদন্তের পরে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে!’
হঠাৎ পুলিশ অফিসারের চোখে পড়লো একটি চিরকুট। এটি মেয়ের লাশের মাথার নিচে পড়েছিলো। এতে লেখা, ‘প্রথমে ছোট ভাইকে বিষ খাইয়ে পরে নিজে বিষ পান করে আত্মাহত্যা করেছি, আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। লজ্জায় এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। ইতি- নাজমা।’
চিরকুট পড়ে পুলিশ অফিসার খুবই চিন্তিত। “লজ্জায় এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।” এর অর্থ কী!
‘আমি সবই বলবো স্যার।’ কান্না থামিয়ে বললেন নাসিরুদ্দিন। খবর পেয়ে এই মাত্র বাড়িতে এসেছেন তিনি। গতকাল বিকেলে ঢাকায় গিয়েছিলো কি একটি কাজে।
পুলিশ অফিসার বললেন,’আপনি কে?’ আমি নাসিরুদ্দিন, নাজমাদের বাবা।’ অফিসার বললেন, ‘আমার সাথে থানায় চলেন, কুদ্দুস আপনি লাশ দুটি থানায় নিয়ে আসেন।’
থানায় মুখোমুখি চেয়ারে বসে কথা বলছেন পুলিশ অফিসার এবং নাসিরুদ্দিন। অফিসার বললেন, ‘বলুন তো তারা আত্মাহত্যা করেছে কেনো?’
‘স্যার আমি খেটে খাওয়া মানুষ। বিদেশ গিয়েছিলাম, তেমন সুবিধা করতে না পেরে ৪ বছর পর দেশে চলে আসি। পরে আর কোনো কাজ না পেয়ে অটোরিকশা চালানো শুরু করি। আমার বউ ছিল খুবই উচ্চাভিলাসী, সুন্দরী। আমি তার চাহিদা মেটাতে পারতামনা।’
নাসিরুদ্দিন কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ভেজা চোখ মোছেন। একটু দম নিয়ে পুনরায় সে বলতে লাগলেন,’আমি যেহেতু তার চাহিদা মেটাতে পারতামনা, তাই আমাদের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। কিছু দিন আগে সে চলে গেলো তার বাবার বাড়ি। আমি তাকে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে আসেনি। গত দুদিন আগে এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে সে। এ খবর জানতে পেরে নাজমা খুব কান্নাকাটি করেছেন।’
অফিসার বললেন,’ হুম, বুঝতে পেরেছি। লাশের পোস্টমটামের পর বোঝা যাবে আসল রহস্য। তবে সে পর্যন্ত আপনি কোথাও যেতে পারবেন না বাড়ি ছেড়ে, ওকে?’
‘ঠিক আছে স্যার, আমি কোথাও যাবো না’- বলে থানা থেকে বেরিয়ে পড়লেন নাসিরুদ্দিন।