• বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

মতামত :: ঘটলো হারুন খাঁ’র রাজত্বের অবসান!

admin / ১২৩১ Time View
Update : সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

মো: হাবিবুর রহমান সুমন :

 

শিবপুর। নরসিংদী জেলার পাচঁটি উপজেলার মধ্যে একটি অন্যতম উপজেলা। শিবপুর পৌরসভা সহ মাছিমপুর, চক্রধা, যশোর, আয়ুবপুর, পুটিয়া, সাধারচর, দুলালপুর জয়নগর, বাঘাব ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত শিবপুর উপজেলা। ২১৭.৭১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় প্রায় সোয়া তিন লাখের বেশি জনসাধারণের বসবাস। জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরৃত্বে এই উপজেলায় রয়েছে ১৯৪ টি গ্রাম। কৃষি প্রধান এই মাটিতে শুয়ে আছেন বাংলাদেশের রুপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সহচর শিবপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ রবিউল আওয়াল খাঁন কিরণ, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুস্থানের মহানায়ক শদীদ আসাদুজাম্মান আসাদ, বিএনপির সাবেক মহাসচীব, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের স্হানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মরহুম আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া।

আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ খাঁন। ছোট বড় সবার কাছেই হারুন খাঁ নামে পরিচিত । তিনি আওয়ামীলীগ পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করেন।১৯৫০ সালে ১২ জুন উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।

১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল দলীয় সমাবেশ শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে রওনা করেন বড় ভাই রবিউল আউয়াল কিরণ খান। কিন্তু শিবপুর উপজেলার খড়কমারা পাহাড়িয়া নদীর ব্রিজের উপর পৌছলে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তিনি। মূলত তখন থেকেই ওতপ্রোত ভাবে আওয়ামীলীগের সাথে জড়িয়ে পড়েন হারুনুর রশীদ খাঁন। জাতীয় পার্টির আমলে শিবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ গ্রহণ করে ছিলেন তিনি। রবিউল আউয়াল কিরণ খাঁনের ছোট ভাই হওয়ার সুবাধে প্রথমবারই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।তখন থেকেই নিজের রাজত্ব কায়েম করতে স্বপ্ন দেখেন হারুনুর রশীদ খাঁন।তবে উপজেলা আওয়ামীলীগে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ নাথায় সুবিধা করতে পারেননি।

১৯৯১, ১৯৯৫, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী ৩ শিবপুর আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মরহুম আব্দুল মান্নান ভূঁ৪য়া।হারুনুর রশীিদ থাঁন আওয়ামীলীগের নেতা হয়েও সবসময় বিএনপির নেতাদের সাথে রেখে ছিলেন সু- সর্ম্পক। যার ফলে সরকার পরির্বতন হলেও স্হানীয় রাজনৈতিক নেতারা হয়রানীর শিকার হতে হয়নি।

১৯৯৭ সাল। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন হারুনুর রশীদ খাঁন।সভাপতির দায়িত্ব পেয়েই দলের মধ্যে নিজের লোকদের সেট করতে শুরু করেন তিনি
।১৯৯৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই সময়ে তিল তিল করে শিবপুরে গড়ে তুলেছিলেন নিজের রাজত্ব।যেখানে তিনিই ছিলেন রাজা। সাবেক সংসদ সদস্য ও নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, বর্তমান সংসদ সদস্য ও নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আলহাজ্ব জহিরুল হক ভূঁ৪য়া মোহন ছিল অসহায়।গ্রামের চৌকিধার থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সকল যায়গায় ছিল তার রাজত্ব। আ’লীগের সভাপতির দলীয় পদে থাকায় কেউ তার সিধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পায়নি। গ্রামের চৌকিদার, সরকারী কর্মকর্তা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আ’লীগের নেতা, সংবাদকর্মী সবাই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। সাবেক আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা মরহুম হারুনুর রশীদ খাঁনের কথার অব্যধ্য হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে বদলী হতে হয়েছিল অন্যত্র।নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কখনো সিরাজ মোল্লা কখনো মোহনের সাথে আঁতাত করেছিলেন হারুনুর রশীদ খাঁন। আবার প্রয়োজন শেষ হলে ছিড়ে ফেলে দিয়েছেন তাদেরকে।

২০০৯ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন বিজয়ী হওয়া পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল হারুনুর রশীদ খাঁনের।কারণ তার রাজনৈতিক মারপ্যাচের জন্যই গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। আলহাজ্ব জহিরুল হক ভূইয়া শিবপুর থেকে দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও নিজের মতো করে কাজ করতে পারেন নি। শিবপুরে হারুনুর রশীদ খাঁনের একচেটিয়া দাপটের জন্য সংসদ সদস্য হয়েও শান্তিতে শিবপুরে ওঠতে পারেননি মোহন। এমনকি শিবপুর সদরে একটি অফিস করতেও দেওয়া হয়নি তাঁকে। সর্ম্পকে মামা ভাগিনার সর্ম্পক হলেও রাজনৈতিক কারণে তাদের মধ্যে প্রায় সময়ই লেগে থাকতো বিরোধ।

১৯৯০ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব মোড়লের আসনেে বসে আমেরিকা। তারপর নিজেদের জন্য বিপক্ষজনক হয়ে ওঠতে পারে এমন ব্যক্তি বা দেশের উপর নিষেদ্ধা জারি করে আমেরিকা। কখনো কথনো বিভিন্ন সংস্থা থেকেও বাদ দেওয়া হয় ঐ সকল ব্যক্তি বা দেশকে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে আমেরিকা ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েেছেন । রাশিয়া নিজেদের অস্তীত্ব রক্ষায় গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের নামে হামলা চালায়।সেই কারণে রাশিয়ার উপর প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা ও তার মিত্র শক্তি জোট ন্যাটো। ঠিক তেমনি নিজের জন্য বিপদজনক হতে পারে এমন ব্যক্তিদের কে হারুনুর রশীদ খাঁন সব সময় রেখেছেন দলের বাহিরে। এদের মধ্যে রয়েছেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি একেএম নাসিম আহমেদ হিরণ, শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলম ভূইয়া, সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাই মাস্টার সহ আরো অনেকে।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতি আলহাজ্ব সিরাজুল ইসণাম মোল্লা ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য জহিরুল হক ভূ্ঁইয়া মোহনের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ খাঁনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা কমিটি।যদিও দলীয় পদ থেকে বাদ দিতে অনেক পূর্ব থেকেই চেষ্ঠা করেছিলেন বর্তমান ও সাবেক এমপি। উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহসীন নাজির ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল নিজের লোক হওয়ায় হারুনুর রশীদ খানের রাজত্বে তেমন কোন আঘাত পড়ে নি।দ্লীয় পদ না থাকলেও দলের যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো হারুনুর রশীদ খানের পরামর্শে।

দীর্ঘ পচিশ বছর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দুই বার উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেছিলেন তিনি।যদিও কখনো কখনো নেতাদের সাইজ করতে পকেট কমিটি রাখার অভিযোগ ছিল হারুনুর রশীদ খাঁনের বিরুদ্ধে।

গত ২৫ ফেবুয়ারী শিবপুর থানার প্রায় দেড়শত মিটার পূর্ব পাশে অবস্থিত নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন হারুনুর রশীদ খাঁন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে সবকিছু খুলে বলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তারপরও এই জগন্যতম ঘটনার সাথে যারা প্রকৃত ভাবে জড়িত তাদেরকে পুলিশ প্রশাসন গ্রেফতার করতে না পারার বেদনা নিয়ে গত ৩১ মে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন হারুনুর রশীদ খাঁন।সেই সাথে অবসান ঘটে হারুনুর রশীদ খাঁনের রাজত্বের।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, শিবপুরের আলো ২৪ ডট কম

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category