• সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮ অপরাহ্ন

মতামত ::: নতুন কারিকুলাম এ প্রজন্মের জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ :: ফারুকুজ্জামান

admin / ২৮২ Time View
Update : শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩

 

::: ফারুকুজ্জামান :::

“নতুন কারিকুলাম এ প্রজন্মের জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ”
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে আমরা এক নতুন যুগে পদার্পন করি। ঐ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার ব্যবস্থা করেন। বিষয়টা হিতের বিপরীত হয়ে দাড়ায় আমাদেরই কিছু সুবিধাবাদী শিক্ষক ও অসচেতন অভিভাবকদের কারণে। তারা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয় মোবাইল। অনলাইন ক্লাস আর গুগোল বা ইউটিউব থেকে অ্যাসাইনমেন্ট করার নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে যে মোবাইল ফোন আমরা তুলে দিয়েছিলাম তা আর কোনো ভাবেই ফেরত নিতে পারিনি। সেখান থেকেই তৈরি হয় তাদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি এবং পড়াশোনার প্রতি অনিহা। কোভিড-১৯ এর পর থেকে প্রত্যেক বছরই হাতে গোনা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী দারিদ্রতা ও শিক্ষার্থীর কোচিং ফিস যোগানোর ক্ষেত্রে পরিবারের ব্যার্থতা অনেক শিক্ষার্থীকেই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য করেছে। কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালমূখী করতে আনা হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যপক পরিবর্তন। “জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা-২০২১” নামে ২০২৩ সাল থেকে চালু করা হয় এই নতুন কারিকুলাম। প্রথম দিকে বিষয়টা সব মহলে ঘোলাটে থাকলেও এখন অনেকটাই পরিষ্কার। সবচেয়ে বড় কথা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এই কারিকুলামে সন্তুষ্ট। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি, গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যা থেকে বেরিয়ে এসে লেখাপড়াকে আনন্দঘন করে শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে এই নতুন কারিকুলাম। একটা গল্প বলি। একজন মাস্টার একটি ছোট বাচ্চাকে বাসায় পড়াতে এসেছেন। বাচ্চাটিকে পড়তে বলায় সে বইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। বইগুলো বেশ আগের। এগুলো পড়তে তার আর ভালো লাগে না। বাচ্চাটির চোখে মুখে একটা বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছিলো। তিনি বিষয়টা বুঝে বাচ্চাটিকে বললেন, তোমার এই বইগুলো পড়তে ভালো লাগে না ? আচ্ছা বইগুলো ছিড়ে ফেলো। বাচ্চাটি হাঁসতে হাঁসতে আনন্দের সাথে বইগুলো ছিড়তে লাগলো। বাচ্চাটির মা এটা দেখে রেগে গিয়ে বললেন আপনাকে তো পড়াতে নিয়ে এসেছি বই ছিড়তে নয়। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বাচ্চাটিকে বললেন, এগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলো। বাচ্চাটি আরও আনন্দের সাথে ছেড়া বইগুলেতে আগুন লাগিয়ে দিলো। আগুন লাগানোর পর তিনি তাকে শেখালেন আগুন লাগলে কোন নাম্বারে ফোন দিয়ে কাদের সাহায্য নিতে হয়। বাচ্চাটিকে দিয়ে তিনি ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেয়ালেন এবং আগুন লাগার কথা বলতে বললেন। ফায়ার সার্ভিস আসলো এবং বাচ্চাটি তাদের আগুন নেভানো দেখলো। নতুন কারিকুলাম আমাদের অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিকট মাস্টার কর্তৃক বাচ্চাটির বই ছেড়া ও পুড়িয়ে দেয়ার মতো ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। তবে বাচ্চাটি এখানে আনন্দের সাথে শিখতে পারলো আগুন লাগলে কিভাবে এবং কাদেরকে ফোন করতে হয়, কোন কোন পদ্ধতিতে আগুন নেভানো যায়। নতুন কারিকুলাম অনেকটা এভাবেই শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনা থেকে বের করে আনন্দের সাথে ভবিষ্যৎ জীবনের কর্মমূখী কাজের বাস্তবতা চিত্রায়িত করছে। আলভা এডিসন ধানের গোলায় আগুন লাগানোর জন্য বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েও যদি বিজ্ঞানী হতে পারেন, স্কুল থেকে বের করে দেয়া আইনস্টাইন যদি পদার্থ বিজ্ঞানের জনক হতে পারেন তবে, অভিভাবকদের বলব আপনার সন্তানও যদি মেধাবী হয় তার মেধা প্রস্ফুটিত হবেই ইনশাআল্লাহ। যৌবনের গানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন “বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে আকড়াইয়া পড়িয়া থাকে।” আসুন পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভুলে নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাই এবং এটি বাস্তবায়নে সহযোগী হই।

লেখক:: সহকারী শিক্ষক, মর্নিংসান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ কাশিপুর, মাধবদী, নরসিংদী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category