মো: হাবিবুর রহমান সুমন :
সংবাদপত্র। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত। সেই সংবাদপত্র হতে পারে তা জাতীয় বা স্হানীয়।প্রিন্ট, অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সবই কিন্তু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভেই অংশ। আর সেই মিডিয়র জন্য দরকার পরে কিছু সংখ্যক কর্মী। যাদের লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনীতি, অনিয়ম ও দূর্ণীতি, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, খেটে খাওয়া মানুষের সুখ ও দুখের কথা সহ আরোও অনেক কিছু।
শিবপুর বাজারের একটি দোকানে বসে আছি।হঠ্যাৎ করে দেখা একটি জাতীয় দৈনিকের নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি মো: মোখলেছুর রহমান এর সাথে।অনেকক্ষণ কথা হলো তার সাথে।কথা বলার এক সময় সাংবাদিকতার পেশার সাথে জড়িত হওয়ার জন্য আমাকে অফার করলেন তিনি। আমিও তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। সম্ভবত ঐ দিনটি ছিল সোমবার।দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আসছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাবো মাধবদী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক খোরাক পত্রিকার অফিসে।কারণ খোরাক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শেখ সাদী স্যারের সাথে মোখলেছুর রহমানের ছিল ভালো সর্স্পক।পত্রিকাটি প্রতি রবিবার প্রকাশ হয়। কিন্তু রিপোর্ট সংগ্রহ করা হতো প্রতি বৃহস্পতিবার। আমি ও মোখলেছ ভাই বৃহস্পতিবার সন্ধায় গেলাম খোরাক পত্রিকার কার্যালয়ে। মুখলেছ ভাইকে সামনে নিয়ে শেখ সাদী স্যার আমাকে কিছু প্রশ্ন করলেন।আমিও সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সব শুনে তিনি বললেন –‘কাজ শুরু করো সুমন’। যাত্রা শুরু হলো সাংবাদিকতার জগতে। অবশ্য তখন আমি শিবপুর সরকারী শহীদ আসাদ কলেজের ছাত্র।
সকাল দশটা।কোন একটি কাজের জন্য শিবপুর থানার পূর্ব দক্ষিণ পাশে অবস্থিত জাম গাছের নিচে দাড়িয়ে আছি আমি।অল্প কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিক নূরুল ইসলাম নূরচান ও মো: আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে দেখা হলো আমার। সংবাদ লেখার ব্যাপারে আমার বিষয়টি খুলে বললাম তাদের দুইজন কে। তারা আমার কথা শুনে সাধ্যমত সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিলেন। নূরুল ইসলাম নূরচান ভাইয়ের কারণে পরিচয় হল ততকালীন একজন বিশিষ্ট কবি ও ছড়াকার আবু আসাদের সাথে।আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন কবি’র সাথে। আবু আসাদ নোয়াদিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা শেষ করে প্রতিদিন বিকালে চলে আসতো শিবপুর বাজারে অবস্থিত নুরুর চায়ের দোকানে। সেখানে চলতো সাহিত্য সর্ম্পকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা।
কয়েব বছর পর স্হানীয় সাংবাদিকদের মান উন্নয়ন ও একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য প্রেসক্লাব গঠন করার চিন্তা-ভাবনা জাগে কয়েক জনের মনে । সেই কারণেই কবি ও স্হানীয় সাংবাদিকরা বাদল ভাইয়ের উজালা প্রেস কার্যালয়ে বসে কমিটি গঠন করার চেষ্টা করা হয় কয়েকবার। সবশেষ একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।কিন্তু কয়েকদিন যাবার পর সেই কমিটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।সাংবাদিকরা চলতে থাকে আগের মত যার যার করে। চারদলীয় জোট সরকারের স্হানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রী ও ততকালীন বিএনপির মহাসচীব আব্দুল মান্নান ভূইয়ার নির্বাচনী আসন নরসিংদীর শিবপুর। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় সাংবাদিকদের সংগঠন প্রেসক্লাব নাই , এটা কি করে সম্ভব। সেই বিবেচনা থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে প্রেসক্লাব গঠন নিয়ে পূণরায় শুরু হয় সাংবাদিকদের জল্পনা কল্পনা। কবি আবু আসাদের সাথে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয় কয়েকবার। সবশেষ কবিকে সাথে নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো শিবপুর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন করার।
২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল গঠন করা হলো শিবপুর প্রেসক্লাব।বিষয়টি অবগত করে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা জন্য অস্হায়ী ভাবে অফিসের জন্য জায়গা চাওয়া হলো ততকালীন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচীব আরিফ উল ইসলাম মৃধার কাছে। তাতক্ষনিক ভাবে তিনি পুরাতন হাসপাতালের পশ্চিম পাশে সরকারী জায়গায় ভাড়ায় থাকা হোটেলের একটু অংশ খুলে দিলেন প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জন্য।সেটাকে ক্লাবের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করলেন সাংবাদিকরা।
নূরুল ইসলাম নূরচান ভাইয়ের নেতৃত্বে চলা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি মেয়াদ পূরণের চার মাস বাকি থাকতেই( ১৬/১২/২০০৬)কমিটি বাতিল করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে কামরুজ্জামান মুকুল আহবায়ক, মো: হাবিবুর রহমান ( মাস্টার) ও জাহাঙ্গীর আলম যুগ্ন আহবায়ক, মো: হাবিবুর রহমান সুমন সদস্য সচীব ও বশির আহমেদ কে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
নতুন এই আহবায়ক কমিটি ১৬ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে ৫ বা ৭ জনকে ক্লাবের সদস্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন একেএম শাজাহান, হারিছুল হক ও মো: আরিফুল ইসলাম খাঁন।২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারী নতুন পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে একেএম শাহজাহান সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলম কে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাত্র চার মাসের মাথায় সেই কমিটি (১২/৫/২০০৭) ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান রেনু শিবপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন।তফসিল অনুযায়ী সভাপতি পদে জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে আমি ও মো: আরিফুল ইসলাম খাঁন মনোনয়ন পত্র জমা দেই অফিস সহকারী ইসমাইলের নিকট ( বর্তমানেও তিনি কর্মরত আছেন)া কিস্তু এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সর্মথন সাধারণ সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম খাঁনের পক্ষে থাকায় নিরুপায় হয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আমি নির্বাচন থেকে সরে দাড়াই। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
বর্তমানে শিবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি পদে এসএম খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরিফুল হাসান দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কমিটি দীর্ঘ আঠার বছর পর ক্লাবের স্মরণিকা ‘সম্প্রীতি’ এর মোড়ক উন্মোচন ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। উক্ত অনুষ্ঠান গত ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।তবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নতুন সদস্যদের সমান মূল্যায়ন করার বিষয়টি দেখতে বেমানান । সেই কারণেই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরচান সম্মাননা স্মারকটি প্রত্যাখান করেছেন।।
ক্লাবের কমিটি গঠন ও কার্যালয় প্রদানে অবদান রাখা আরিফ মৃধা ও মরহুম কবি আবু আসাদ কে মূল্যায়ন না করার বিষয়টি আমার কাছে অত্যান্ত দুংখজনক মনে হয়েছে। ক্লাবের যারা সদস্য আছেন তাদের প্রতি আমার প্রত্যাশা ভবিষতে প্রাপ্য অনুযায়ী সবাইকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবেন।
লেখক:: প্রতিষ্ঠাতা সহ – সাধারণ সম্পাদক, শিবপুর প্রেসক্লাব. সম্পাদক ও প্রকাশক, shibpureralo24.com