• বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

ইসলাম ও জীবন ::: মনের পশুকে দাও কোরবানি :: মোঃ হাবিবুর রহমান

admin / ৩৪০ Time View
Update : বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

মো: হাবিবুর রহমান 

কোরবানি শব্দের আরবি হলো কুরবান। ওই বস্তুকে কুরবান বলা হয় যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা হয়। তা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে হউক বা যে কোনো দান খয়রাতের মাধ্যমে হতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট জানোয়ার জবাই করাকে কোরবানি বলে।

প্রকৃত পক্ষে এ ঘটনা ছিল ইব্রাহীম আঃ এর আত্মত্যাগের কঠিন পরীক্ষা। ইব্রাহীম আঃ উওীর্ন হলেন নিজ পুএ ইসমাইল আঃ কে আল্লাহর হুকুমে কোরবানি দিতে স্বেচ্ছায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আমাদের এই কোরবানি প্রকৃত পক্ষে হযরত ইব্রাহীম আঃ এর এই অতীত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিচারণ।মানুষের নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে আত্মত্যাগী হওয়ার মহৎ অনুপ্রেরণায় ইসলামে কোরবানীর বিধান এসেছে। কিন্তু আমরা পৃথিবীর মায়ার মোহনজালে আবদ্ধ হয়ে ভুলে গেছি আত্মত্যাগ। আমরা আমাদের অর্জিত সম্পদের দাসত্ব করছি। ফলে দান বা ত্যাগের ধারণা শূন্যের কোঠায় উপনীত হয়েছে। দানের পরিবর্তে গ্রহণ, ত্যাগের পরিবর্তে লাভের স্পৃহায় মানুষের মানবিকতা ভুলে গিয়ে পাশবিকতা রূপ ধারণ করেছে। হেন অসহায় মানব হৃদয়ে পাশবিকতা বিনাশ না হলে মানবিকতা প্রকাশ সম্ভব নয়। আল্লাহর রাহে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার দীপ্ত শপথের নাম কোরবানি। কোরবানি দাতাকে বুঝতে হবে পশুর গলায় ছুড়ি চালানো নয়, এ ছুরি চালানো হচ্ছে কোরবানি দাতার নিজের প্রবৃত্তির গলায়। তখন তাকে ভাবতে হবে, সে যে তার নিজ সন্তানকে কোরবানি দেয়ার পরিবর্তে পশুকে কোরবানি দিচ্ছে। আল্লাহর প্রেমে নিজ সন্তান কে কোরবানি করলে যে ভারাক্রান্ত শোকের ছায়া নেমে আসতো সেই অনুভূতি পশুর গলায় ছুড়ি চালানোর মাধ্যমে অনুভব করা যায়। অন্যথায় কোরবানীর সার্থকতা পাওয়া সম্ভব নয়। কবির ভাষায় ‘ তাকওয়া অর্জনে হতে মহীয়ান, নিজ পুত্র মনে করে দাও কোরবান’। যে কোরবানীতে তাকোয়ার আবেগ অনুভূতি নেই, আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই কোরবানীর কোন মূল্য হতে পারেনা। বনের পশুকে কোরবানীর মাধ্যমে মনের মায়ার দাগ কাটিলে হৃদয়ে আসবে শুদ্ধতা। এ শুদ্ধতা লাভের জন্যই তাকওয়া যা অর্জনের জন্য কোরবানীর ঈদুল আজহা। মানুষ আত্মস্বার্থ ত্যাগ না করি তাকওয়া ভুলে গিয়ে প্রতিযোগীতামূলক ভাবে গরু, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, জবাই করে উদর পূর্তি ভুঁড়ি ভোজে আনন্দ উপভোগ করে থাকে। আত্মীয় স্বজনদের কাছে নিজের নাম ফোটানোর জন্য বলে থাকে আমি অত লক্ষ টাকার কোরবানি দিয়েছি, যেখানে কোরবানিতে প্রতিযোগীতার বহিঃপ্রকাশ বিদ্যমান। আমি একটি বাস্তব ঘটনার সামান্য একটু ব্যক্ত করে মনের দাগকাটা অনুভূতি লাগব করতে ইচ্ছে হলো। কোন এক বছর জৈনক স্বনামধন্য বিত্তবান একটি বৃহৎ মহিষ উচ্চ মূল্যে ক্রয় করতঃ ঈদুল আজহার দিন মহিষটিকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বেধে যখন মৌলভী সাহেব গলায় ছুড়ি চালালেন, তখন মহিষের আংশিক গলা কাটার মুহূর্তে মহিষ প্রানে বাঁচার আশায় হঠাৎ পায়ের বাঁধন ছিঁড়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য লোকালয় ছেড়ে নির্জনে লোকানোর আশায় প্রাণপনে দৌড়াতে থাকে। এমনি ভাবে ঘটনার স্থান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে এক জঙ্গলে প্রাণ বাঁচানোর জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় গলা থেকে রক্ত ঝরছিল, চোখে ব্যথার জল টলমল করছে, হৃদয়ে যেন ছিল বাঁচার আকুতি। কিন্তু না, তা আর হয়নি। কতিপয় ব্যক্তি ক্লান্ত মহিষটি আটক করে, জঙ্গলেই তার বাচার ইচ্ছা অবসান ঘটায়। যেখানে শোকের কোন স্পর্শ নেই।মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তখনই প্রমাণিত হয় যখন সে স্রষ্টার নিকট আত্মসমর্পণ করে। তাই যদি হয় তবে স্বার্থান্বেষী হয়ে সে যা খুশী তাই করতে পারে না।

সৃষ্টির কল্যাণ আত্মোপলব্ধি করে কর্ম সম্পাদন করাই তাকওয়া সঠিক পন্থা। পশু কোরবানীর সময় ভাবতে হবে আমার মধ্যে অসত্য, অপকর্ম অন্যায় উশৃঙ্খলা, হিংসা বিদ্বেষ সহ যাবতীয় অনিয়ম ও পাশবিকতা কোরবানি দিয়ে আত্মশুদ্ধি গ্রহণ করতে পেরেছি কি না। পশু কোরবানীর মাধ্যমে আমাদের মনের পশুত্ব কে বিসর্জন দিয়ে আত্মশুদ্ধির পথ প্রসারিত এবং তাকওয়া অর্জিত হলে ঈদুল আজহার সার্বিক স্বার্থকতা সফল হবে।নতুবা অনেক টাকার কোরবানীর দিয়ে সমাজে নিজেদের পাওয়ার দেখানো যাবে,কিন্তু আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব না। তাই কোরবানীর মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করার প্রত্যাশা আমাদের মনে জাগ্রত হউক।

লেখক: সাংবাদিক ও সহ – সভাপতি শিবপুর প্রেসক্লাব.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category