মো: আসাদুজ্জামান আসাদ
শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ফরমান আলী ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ (৫২), উপজেলার পুটিয়া গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও উপজেলার পূর্ব মুনসেফেরচর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম আরিফ (২৮)। এদের মধ্যে ফরহাদ ও আরিফ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অপর আসামি আসাদ জামিনে রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ মার্চ গোপন সূত্রের ভিত্তিতে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খান মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা কালে ফরহাদ ও আরিফ নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ওই সময় ফরহাদের দেহ তল্লাশি করে জার্মানির তৈরি একটি রিভলবার ও ৩ রাউন্ড গুলি এবং আরিফের দেহ তল্লাশি করে আমেরিকার তৈরি আরেকটি রিভলবার ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, উক্ত দুটি অস্ত্র গত ২৫ ফেব্রæয়ারি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খাঁনকে গুলি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত ফরহাদ ও আরিফ চেয়ারম্যানকে গুলি করার সময় বাসার বাইরে গেটে অবস্থান করেছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে অস্ত্রসহ ঢাকায় আত্মগোপন করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ নির্দেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে তারা অস্ত্রসহ ঢাকায় আত্মগোপনের জন্য চলে আসে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
এই ঘটনায় এসআই খান মনিরুজ্জামান বাদি হয়ে মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ফরমান আলী দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ- পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ফরমান আলী বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ফরহাদ, আরিফ ও আসাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আসামি আসাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। গুলিবিদ্ধের তিন মাস পর গত ৩১ মে বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান এই রাজনীতিবীদ।
হামলার ঘটনার দুই দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদি হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এজাহার নামীয় দুজন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ ৪ জন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
পরদিকে মামলায় নাম না থাকলেও হারুন খাঁন জীবদ্দশায় একাধিকবার বিভিন্ন মিডিয়ায় এই গুলির ঘটনায় আসাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে ঘটনায় ব্যবহৃত অস্র উদ্ধারের মামলায় আসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিল পুলিশ।
সূত্র : দৈনিক দেশ রুপান্তর