• মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

কবি আবু আসাদ ও কিছু কথা::: লেখক :: নুরুল ইসলাম নূরচান

admin / ৫১৯ Time View
Update : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

 

কবি ও ছড়াকার মরহুম আবু আসাদ.

নূরুল ইসলাম নূরচান

আবু আসাদ [ ১১ মার্চ ১৯৫৪-১৪ জানুয়ারি ২০১২]। তাঁর ডাক নাম ছিলো বাচ্চু। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈশাখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম ইন্তাজ আলী, মা আমিনা খানম।

তিনি হাই স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। এসএসসি পাস করার পর স্থানীয় নোয়াদিয়া-খৈশাখালি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি।

“গোবরে পদ্মফুল ফোটে” এই প্রবাদবাক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। অযোপাড়া গাঁয়ে জন্ম গ্রহণ এবং বসবাস করেও ঢাকায় বসবাসরত বড় বড় লেখকদের সাথে পাল্লা দিয়ে লিখেছিলেন, বাংলা শিশু সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি।

তিনি আজীবন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর একটা বিশেষ গুণ ছিল, যে কোনো বিষয়ের উপর তাৎক্ষণিক একটি লেখা দাঁড় করে ফেলতে পারতেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন স্বভাবকবির মতো। তার প্রথম এবং স্কুল জীবনের বহু লেখা মুখস্ত ছিল। তিনি অন্যদের সাথে বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনে সম্প্রসারিত নিয়মিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং তার স্বরচিত শিশুতোষ ছড়া কবিতা আবৃত্তি করতেন।

তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ১৯৯৭ সালের কোন একদিন। ওই সময় আমার প্রথম উপন্যাস ‘এরই নাম জীবন’ প্রকাশ হয়। এই বইটি পড়ার পর থেকেই তিনি আমাকে খুঁজে বের করে আমার সাথে পরিচিত হন। এর আগে আমি তাঁকে আর দেখিনি। যদিও আমাদের বাড়ি একই উপজেলায়। আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর তার প্রতিটি লেখার প্রথম পাঠক ছিলাম আমি। তিনি যতগুলো লেখা পত্রিকাতে পাঠাতেন সেসব লেখা নিয়ে আমরা দুজন আলোচনা সমালোচনা করতাম, প্রয়োজনে অনেক লেখা পরিমার্জন পরিবর্ধন করতে হয়েছে তাকে। যদিও আমি চড়াকার নই তারপরও তিনি আমাকে প্রাধান্য দিতেন বেশি।

আঞ্চলিক পত্রিকার পাশাপাশি প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতো। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনেও তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতো। একসময় তিনি স্থানীয়দের নিয়ে যাত্রাদল গঠন করে তাঁর লেখা বিভিন্ন নাটক মঞ্চায়ন করতেন। সে ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন এবং গানও গাইতে পারতেন, গানের গলাও ছিল ভালো। পল্লীগীতি এবং দেশাত্মবোধক গানের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি।

তিনি সাহিত্যের প্রতি এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে, সংসার করার কথাও ভুলে গিয়েছিলেন। তাই আজীবন ছিলেন চিরকুমার।

জীবদ্দশায় একটি মাত্র প্রকাশনা ছিলো তাঁর। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক “আমার দেখা স্বাধীনতা” নামে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া অন্য লেখকদের বই প্রকাশ করেন না।

এছাড়া অর্থ সংকটের কারণে নিজের উদ্যোগে কোন বই প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। তার লেখা অসংখ্য ছড়াকবিতা অগ্রন্থিত রয়েছে। হয়তো অযত্ন অবহেলায় অনেক লেখা নষ্টও হয়ে গেছে। লেখাগুলো খুঁজে বের করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করলে শিশু কিশোর বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হতো। তার আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল, টেক্সট বুকে যেন তার লেখা স্থান পায়, তাঁর মতে, ‘টেক্সট বুকে লেখা না গেলে লেখকের কোন সার্থকতা থাকে না।’ তার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি কোনদিন?

শেষ করছি তাঁর লেখা ‘আমার দেখা স্বাধীনতা’ বই থেকে একটি লেখা দিয়ে :

লাল সবুজের দেশ

বন বনানীর লতা পাতায়
শিমুল পলাশ জবার খাতায়
কৃষ্ণচূড়ার মিতে পাতায়
কি অপরূপ বেশ
আকাচূড়ে ওই পতাকায়
লাল সবুজের দেশ।

ঘাস শিশিরে রৌদ্র লোটে
দীঘির জলে শাপলা ফোটে
টিয়ের পালক- মালায়-ঠোঁটে
এটা-ই করে পেশ
আকাশচূড়ে ওই পতাকায়
লাল সবুজের দেশ।

কাক- কোকিলের সুর গীতিতে
সিঁদুর পরা মা-র সিঁথিতে
আকাশ সাজে সেই রীতিতে
রাতটা হলে শেষ
আকাশচূড়ে ওই পতাকায়
লাল সবুজের দেশ।

লেখক : সাহিত্যিক, সাংবাদিক.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category