• সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
অসুস্থ সাংবাদিকদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত দলীয় সিদ্ধান্তের কারণেই মান্নান ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে আমাকে নির্বাচন করতে হয়েছিল — তোফাজ্জল হোসেন রায়পুরায় টেঁটাযুদ্ধে আমিন ও বাশার নামে দুই জন নিহত রায়পুরায় গৃহবধূ ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিদাতা রাকিব মিয়া গ্রেফতার শিবপুর উপজেলা ইমাম পরিষদের নতুন কমিটি গঠন চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা বন্ধ করাই হবে আমাদের প্রথম কাজ — সরোয়ার তুষার শিবপুরে নব যোগদানকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বরণ শিবপুরে নয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে চারজনই জেল ও আত্বগোপনে পলাশে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত শিবপুরে গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন

গল্প : প্রথম প্রেম ::: নুরুল ইসলাম নূরচান

admin / ১৪৭ Time View
Update : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪

গল্প : প্রথম প্রেম

নুরুল ইসলাম নূরচান

প্রথম দিন একটি গোলাপ ফুল পেয়েছিলাম। তবে তাজা ফুল নয়, কাগজে আঁকা গোলাপ। সাদা কাগজে তার হাতে আঁকা ফুলটি বেশ সুন্দর হয়েছিল। সে এটি কী কারণে আমাকে দিয়েছে তা বুঝতে পারিনি। বলতে গেলে আমি খুব বোকা ছিলাম তখন। তাছাড়া প্রেম-ভালোবাসা কী এবং কীভাবে করে- তাও আগে বুঝি নি। এভাবে পরপর তার কাছ থেকে কাগজে আঁকা গোলাপ পেয়েছি কয়েকটি। তবে উপহারগুলো তার নিজের হাতে আমাকে কখনো দেয়নি, দিয়েছে অন্যদের মাধ্যমে।

আমি প্রথম তাকে দেখেছিলাম তার নানাবাড়িতে। তখন সে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল। তার নানাবাড়ি আমাদের গ্রামে-ই। বাবার বাড়ি আমাদের গ্রামের দুতিন গ্রাম পরে। এরপরও আমি তাকে ভালোভাবে চিনতাম না।

প্রথম দিন কাগজে আঁকা ফুলটি পেয়ে খুবই ভালো লেগেছিল। আনন্দও পেয়েছিলাম যথেষ্ট। এরপর এক মাসের মধ্যে আরো তিন-চারটি কাগজে আঁকা ফুল পেয়ে নিজের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করল। এই অনুভূতি যে কিরকম তা আমি বলে কয়ে শেষ করতে পারবো না, একমাত্র কবি সাহিত্যিকরাই প্রকাশ করতে পারবেন।

একদিন আমি তাকে খুঁজতে গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম, সে বাড়িতে চলে গেছে। হঠাৎ আমার মনে একটি বড় ধরনের ধাক্কা লাগলো, তার অনপস্থিতিতে বুঝতে পারলাম, আমি যেন কী একটি বস্তু হারিয়ে ফেলেছি। বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠলো। পরে একজন আমার হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিল।

তাতে লেখা, ‘আমি বাড়িতে চলে গেলাম, আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি, আবার আসলে দেখা হবে।’

আমি তাকে সম্বোধন করতাম ‘তুই’ বলে, আর সে আমাকে ডাকত ‘আপনি’ করে।

বেশ কিছুদিন পর সে আবার আসলো নানাবাড়িতে। এবার সামনাসামনি দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তার নম্র-ভদ্রতা আমাকে মুগ্ধ করত খুব বেশি, হালকা পাতলা গড়ন, চোখ দুটি টানাটানা, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মিতু কখনো কড়া সাজগোজ করতো না। তারপরও তাকে দেখলে মনে হতো, রূপকথার পরির মতো।

এবার তার পক্ষ থেকে আমি একটি দারুণ উপহার পেয়েছি। সাদা কাপড়ের জমিনে সুঁই-সূতার কারুকাজ ও গোলাপ সম্বলিত রুমাল। খুশিতে আমি একেবারে আটখানা! পরে একসময় আমিও তাকে একটি রুমাল উপহার দিয়েছিলাম। আমার দেওয়া রুমালটি হাতে কাজ করা নয়, বাজার থেকে কেনা। এটিই আমার প্রথম উপহার হিসেবে তাকে দেওয়া, এটি পেয়ে সে মহা খুশি হয়েছিল। এক সময় দুজন দুজনকে ভালোবাসি এবং একে অপরকে বিয়ে করবো-এ কথা পাকা হয়েছিল। আমি মিতুর সামনে পড়লে মনে হতো, সে আমার ‘ভালোবাসার’ মানুষ নয়-গুরুজন।

মিতু আমার সামনে পড়লে লজ্জায় লাল হয়ে যেতো। এজন্য তার সাথে সামনাসামনি তেমন কোন কথা হয়নি, সে সামনে পড়লে আমিও জানি কেমন হয়ে যেতাম। সবসময়ই একটা লাজুক লাজুক ভাব কাজ করত আমাদের মধ্যে।

আমাদের মধ্যে যখন গভীর ভাব চলছিল তখন বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল তার পরিবারের মধ্যে। এরপর থেকে মিতুর চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। আমার সাথে সম্পর্ক কিংবা বিয়ে- কোনটাতেই তার পরিবার রাজি নন। এরপর থেকে আমার সাথে সাক্ষাৎ এবং তার নানাবাড়িতে আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর আমি উন্মাদের মত হয়ে পড়ি। আমি বেকার, কোন কর্ম নেই। পরে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি হয়েছিল, কিন্তু সেখানে বেশিদিন টিকতে পারিনি, চাকরি ছেড়ে চলে এলাম বাড়িতে।

একসময় ছোটখাটো একটি ব্যবসায় শুরু করলাম। মিতুকে আজীবন আমার করে রাখার জন্য বারবার বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তার পরিবার রাজি হননি।

একবার আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে লুকিয়ে তার সাথে দেখা করেছিলাম। পুকুর পাড় বড় একটি গাছের ছায়ায় বসে সারাদিন কাটিয়েছিলাম আমরা। এ সময় মিতুর সাথে অনেক কথা হয়েছে…।

শেষ পর্যন্ত আমার প্রথম প্রেমের স্বপ্ন মেঘে ঢেকে গেলো।

রচনাকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২৪


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category