গল্প : মমত
নুরুল ইসলাম নূরচান
একটি ময়লার স্তূপের পাশে একদল শেয়াল কুকুরের মচ্ছব চলেছে সারারাত। ফজরের নামাজের আযানের পর পাশের রাস্তা দিয়ে লোকজনের চলাচল দেখে শেয়ালের দল চলে গেছে। যদিও শেয়াল এখন মানুষকে তেমন একটা পরোয়া করে না, তারপরও তারা চলে গেছে।
সকালে ময়লার স্তূপের চার পাশ ঘিরে একটি কুকুর ঘুরছে, ঘেউঘেউ করছে। একটু দূরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আরও বেশ ক’টি কুকুর। কিন্তু শক্তসমর্থ ওই কুকুরটির জন্য অন্য কুকুরগুলো ময়লার স্তূপের দিকে এগুতে পারছে না।
সদ্য প্রসূতি এক নারী উন্মাদের মতো কী যেন খুঁজতে খুঁজতে ময়লার স্তূপের কাছে এলো। তার পরনের কাপড়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। নারীকে দেখে কুকুরটি আগের চেয়ে গলায় আরও অনেক বেশি জোর দিয়ে ঘেউঘেউ করছে আর নারীকে এদিকে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কী আছে ময়লার স্তূপে!
সেদিকে এগিয়ে গেলো নারী। সে কাছে গিয়ে দেখলো, একটি শপিং ব্যাগ ময়লার স্তূপের ভেতর পড়ে রয়েছে। তাতে একটি নবজাতক। ওয়াও ওয়াও কান্নার শব্দ ভেসে আসছে শপিংয়ের ভেতর থেকে।
দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে সযতনে বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো নারী। সে চিনতে পেরেছে- এটিই তার নাড়ি ছেঁড়া ধন কুসুম।
এর আগে আরও দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে এ নারী। এবারও কন্যা সন্তান প্রসব করায় তার স্বামী ক্ষুব্ধ হয়ে সকলের অগোচরে নবজাতককে এখানে এনে ফেলে গেছে। মা’র জন্য সব সন্তান-ই সমান। তাই পাগলপারা হয়ে তার সন্তানকে খুঁজতে খুঁজতে ময়লার স্তূপে এসে পেয়েছেন।
বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলেন মা। পেছনে পেছনে কুকুরটিও।
লেখক::: কবি ও সাহিত্যিক.