একজন মুসলমান ব্যাক্তি মৃত্যুর পর জানাজার আগে লাশ সামনে রেখে লম্বা বক্তৃতা দেওয়া ইসলাম কতোটুকু সর্মথন করে, এ ব্যাপারে হাদিসের রেফারেন্স সহ লিখেছেন সাবেক শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ আজিজুল হক কাসেমী :-
@ জানাজার আগে বক্তৃতার হুকুম @
জানাযা সামনে রেখে ভাষণ দেবার প্রচলন আমাদের দেশে খুব বেশি। জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের জানাযায় দেখা যায়, লাশ সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে সেলেব্রিটিরা পালা করে বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। পল্টনের মহাসমাবেশের মত এখানেও একজন পরিচালনা করে যাবতীয় টাইটেলসহ বক্তাদের নাম ঘোষণা করছেন।দুনিয়াদার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেখাদেখি উলামায়ে কেরাম ও এ সংস্কৃতি গ্রহণ করে নিয়েছেন!
অথচ মানুষের মৃত্যু হয়ে গেলে গোসল দিয়ে কাফন পড়িয়ে দ্রুত জানাযার নামাজ পড়ে দাফন করতে রাসুল সা. নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে নামাযের আযান-ইকামতও নেই।নেই কোনো রুকু সিজদাও! তবে ইদানীং জানাযার নামাযের পূর্বে দীর্ঘ সময় বক্তৃতা প্রদান একটি কুসংস্কারের রুপ নিয়েছে। সাধারণত মৃত ব্যক্তি ‘ভালো লোক’—এ বক্তব্যই ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়। এমনকি ক্ষেত্রভেদে তা হয় ‘রাজনৈতিক বক্তৃতার মুক্তমঞ্চ’। বিশাল বক্তৃতা পর্বের জন্য জানাজার নির্ধারিত সময় বিলম্বিত হয়। অথচ এই রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানের জন্য জানাযার নামায প্রবর্তিত হয় নি। তাছাড়া জানাজার নামাযের সময় বিলম্বিত হলে অনেকের সমস্যা হয়। বহু মানুষ বিরক্ত বোধ করতে থাকেন। অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ রেখে অল্প সময়ের জন্য জানাযায় শরীক হতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘ বক্তব্যের কারণে পেরেশানীর শিকার হন। নামাজের জন্য কাতারবন্দী হয়ে দাড়ানো মুসল্লিদের বড় একটা অংশ হলেন বয়স্ক মানুষ।এসব বয়স্ক মানুষের অর্থাইটিস, বাতব্যাথা, কোমরব্যাথা, পাকাঁপাসহ নানা ধরনের জটিল অসুখবিসুখ, নিউরোলজিক্যাল প্রবলেম থাকে। তারা দীর্ঘক্ষণ সটান দাড়িয়ে থাকতে পারেন না। জানাযা নামাজে এসে তারা পড়েন বেকায়দায়। অনেক সময় এসব বয়স্ক মানুষ কাতারবন্দী হয়ে দাড়িয়ে থাকতে না পেরে মাটিতে বসে পড়েন। তাদের এ কষ্টের প্রতি বক্তাদের কোন সহানুভূতি থাকেনা। জানাযা নামাযের আগে কারা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে থাকেন; সমাজের সেই মানুষগুলোর পরিচয় দেয়ার নিশ্চয়ই দরকার নেই। কারণ সবাই তাদেরকে চেনেন, জানেন, মানেন। তাদের একটিই পরিচয়, তারা নেতা। মানুষ নন। কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউ পেশাজীবি নেতা, কেউ কৃষক নেতা, কেউ পরিবহন নেতা, কেউ যুবনেতা, কেউ ছাত্র নেতা, কেউ নেতার নেতা। অথচ জানাজার নামাযের পূর্বে পরিবারের পক্ষে একজন ও ইমাম সাহেবের ‘মৃত্যু চিন্তামূলক’ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হলে যথেষ্ট হয়ে যায়। তাই জানাযার সময় মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন জন বক্তব্য দেয়ার প্রথা শরী‘আত সম্মত নয়।
উল্লেখ্য যে, জানাযার পূর্বে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘মাইয়েত ভাল ছিলেন’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটিও নিন্দনীয় বিদ‘আত।
★লাশ সামনে রেখে নবীজি সা. কি বলতেন?
হাদীসে আছে নবী করীম সাঃ এর অভ্যাস ছিল কোন জানাযা সামনে আসলে জিজ্ঞেস করতেন তার ঋণ রয়েছে কি? যদি জবাব হত ঋণ নাই। তাহলে জানাযা পড়িয়ে দিতেন। অন্যথায় পড়াতেন না।
কোন একজন সাহাবীর লাশকে সামনে রেখে নবী করীম সাঃ প্রশ্ন করেছিলেন যে তাঁর কোন ঋন আছে কি- না? জবাবে সাহাবীরা বলেছিলেন ঋন রয়েছে। নবী করীম সাঃ বললেন : তোমরা তার জানাযার নামায পড়ে নাও, আমি তাঁর ঋন থাকাবস্তায় জানাযার নামায পড়াবনা। সাহাবীরা বললেন : আমরা ঋণের জিম্মাদার হয়ে গেলাম। তখন নবী করীম সাঃ জানাযার নামায পড়ালেন। (সহীহ বুখারী :২২৮৯)
2289 حَدَّثَنَا الْمَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي عُبَيْدٍ ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ، فَقَالُوا : صَلِّ عَلَيْهَا. فَقَالَ : ” هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ ” قَالُوا : لَا. قَالَ : ” فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا “. قَالُوا : لَا. فَصَلَّى عَلَيْهِ، ثُمَّ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ أُخْرَى، فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، صَلِّ عَلَيْهَا. قَالَ : ” هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ ” قِيلَ : نَعَمْ. قَالَ : ” فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ ” قَالُوا : ثَلَاثَةَ دَنَانِيرَ. فَصَلَّى عَلَيْهَا، ثُمَّ أُتِيَ بِالثَّالِثَةِ فَقَالُوا : صَلِّ عَلَيْهَا. قَالَ : ” هَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ ” قَالُوا : لَا. قَالَ : ” فَهَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ ” قَالُوا : ثَلَاثَةُ دَنَانِيرَ. قَالَ : ” صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ “. قَالَ أَبُو قَتَادَةَ : صَلِّ عَلَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَلَيَّ دَيْنُهُ. فَصَلَّى عَلَيْهِ.رواه البخاري
★কেউ মারা গেলে শরীয়তের নির্দেশনা.
কোনো ব্যক্তি মারা গেলে শরীয়তের নির্দেশনা হল বিলম্ব না করে তাকে গোসল দিবে, কাফন পরাবে। অতপর জানাযা নামায পড়ে দ্রুত দাফন করে দিবে। একাধিক হাদীসে মৃত্যুর পর থেকে দাফন পর্যন্ত সকল কাজ দ্রুত আঞ্জাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তোমরা তাকে আটকে রেখো না। তাকে দ্রুত দাফন করে দিও।-আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস : ১৩৬১৩; ফাতহুল বারী ৩/২১৯)
قال الحافظ ابن حجر العسقلاني في فتح الباري شرح صحيح البخاري: حديث ابن عمر، سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ” إذا مات أحدكم فلا تحبسوه، وأسرعوا به إلى قبره ” أخرجه الطبراني بإسناد حسن، ولأبي داود من حديث حصين بن وحوح مرفوعا: ” لا ينبغي لجيفة مسلم أن تبقى بين ظهراني أهله ” ، الحديث.
عَنْ عَبْدِ اللّٰہِ بْنِ عُمْرَ قَا لَ سَمِعْتُ النَّبِیَّ ﷺ یَقُوْلُ اِذَا مَاتَ اَحَدُکُمْ فَلَا تَجْلِسُوْ ہُ وَاَسْرِعُوْا اِلٰی قَبْرِہٖ‘‘ (مشکوٰۃباب دفن ا لمیت الفصل الثالث صفحہ۱۴۹)
এক হাদিসে রয়েছে, ‘তিন কাজে বিলম্ব করতে নেই। সেগুলোর অন্যতম হলো, ‘যখন জানাজার জন্য লাশ উপস্থিত করা হয়, তখন দেরি করতে নেই।’
1075 حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْجُهَنِيِّ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُمَرَ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ : ” يَا عَلِيُّ، ثَلَاثٌ لَا تُؤَخِّرْهَا : الصَّلَاةُ إِذَا أَتَتْ، وَالْجَنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ، وَالْأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَهَا كُفُؤًا ”
رواه الترمذي وأخرجه ابن ماجه صفحة 108 والحاكم وابن حبان . قال ميرك : رجاله ثقات والظاهر أن إسناده متصل . قال الحافظ الزيلعي في نصب الراية بعد ذكر هذا الحديث عن جامع الترمذي ما لفظه : أخرجه الحاكم في المستدرك في النكاح وقال صحيح الإسناد ولم يخرجاه انتهى .
হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার খাটলি নিয়ে দ্রুতবেগে যাও (কবরস্থ করার জন্য)। কারণ, মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয় তাহলে তো তোমরা তাঁকে কল্যাণের নিকটবর্তী করে দিলে, আর যদি সে নেককার না হয় তাহলে এক অকল্যাণকে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে। (বুখারী শরীফ, ১/১৭৬)
1315 حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، قَالَ : حَفِظْنَاهُ مِنَ الزُّهْرِيِّ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ “. رواه البخاري
উপরোক্ত হাদীসেও মৃত্যুর পর বিলম্ব না করে কাফন, জানাযা দ্রুত সম্পন্ন করে তাড়াতাড়ি দাফন করে দেওয়ার তাকিদ করা হয়েছে।এ সংক্রান্ত দলিলের আলোকে ফকীহগণ মৃতের গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করাকে উত্তম বলেছেন এবং বিনা ওজরে বিলম্ব করাকে মাকরূহ বলেছেন।
অবশ্য জানাযা সামনে না রেখে অন্য সময় আগে-পরে ‘সকলে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের গুণাবলী বর্ণনা করতে চাইলে করা যায়। কেননা মুমিন বান্দাগণ এ পৃথিবীতে আল্লাহর জন্য সাক্ষী স্বরূপ’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৬২, ‘জানাযা’ অধ্যায়)।
এমনিভাবে মুসল্লীদের উপস্থিতির সুবিধার্থে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে ইমাম কথা বলতে পারেন।রাসুল (সা.)-এর যুগে জানাযার আগে মৃত ব্যক্তির ঋণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতো। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের আত্মা ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে, জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (তিরমিজি)
★আলেমদের জানাযাতেও কুসংস্কার.
ইদানিং অনেক উলামা-মাশায়েখের লাশকে সামনে নিয়েও এমনটি করা হচ্ছে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন বা সালাফে সালেহীন থেকে কি এর কোন প্রমান আছে? দারুল উলুম দেওবন্দে কি কোন আলেম মারা যাওয়ার পর তার লাশ সামনে নিয়ে জীবনালোচনা করা হয় বা হয়েছে? লাশ সামনে রেখে এসব আলোচনা কি জরুরী? মাসিক আল কাউসারে এসেছে- লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে জীবনালোচনা করা, বিভিন্নমুখী ভাষণ-বক্তৃতা দেওয়া ইত্যাদি সবই গর্হিত। এগুলোর মধ্যে জীবিত মৃত কারোরই কোনো কল্যাণ নেই। এসব অনর্থক ও বেহুদা কর্মকান্ড পরহেয করা সকলের জন্য জরুরি।
যেই সময়টাতে লাশ সামনে রেখে দীর্ঘ বক্তৃতা প্রদান করে মুসল্লীদের বিরক্ত করা হয়,সেই সময়টাতে ইমাম সাহেব যদি ঋণের পরিশোধের গুরুত্ব, মৃত্যুর চিন্তা, তাসবীহ-তাহলিল প্রভৃতি বিষয়ে বয়ান করতেন। তাহলে একটি কথা ছিল।এতে মূর্দ্দা-জিন্দা উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক হতো।
জানাযার নামাযের আগে লাশ সামনে রেখে বক্তৃতা বাজির সংস্কৃতি পরিহার করুন,কোনো মুসলমানের মৃত্যুর পর গোসল কাফন জানাযা দিয়ে তাড়াতাড়ি দাফন করাই সুন্নত।জানাযার নামাজে বক্তৃতা বাজির “কুসংস্কার “। এটি একটা ফ্যাশন। ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রিয় পাঠক! এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসুন, জানাযার নামাজে বক্তৃতা বাজির এই কুসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হই।
★ভেবে দেখার আহ্ববান.
পৃথিবীর সব জায়গায়,সব আয়োজনে যত অনিয়ম,অব্যবস্থাপনা,বিশৃংঙ্খলা থাকুক না কেন জানাযার নামাজটা যাতে বিরক্তবোধ ছাড়াই বিশুদ্ধভাবে পুরোপুরি হক আদায়ে সম্পন্ন করা যায়; সে চেষ্টা করা উচিত। শরীয়তের নির্দেশনার প্রতি সকলকে যত্নবান হওয়া উচিত। তাই স্বাভাবিক সময়ের ভিতরে মৃতের জানাযা-দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেলে মৃতের ওলি উপস্থিত লোকদেরকে নিয়ে জানাযা পড়ে দ্রুত দাফন করে দিবে। এ সময়ের ভিতর কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হলে তার জন্য বিলম্ব করা সমীচীন হবে না।অবশ্য ওলি নিজেই যদি দূরে অবস্থান করার কারণে স্বাভাবিক সময়ের ভিতরে তার উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ওলির জন্য উচিত তো এটাই যে, তার জন্য অপেক্ষা করতে না বলে দ্রুত দাফন করে দিতে বলবে। এতে শরীয়তের হুকুমের প্রতি যথাযথ আমল হবে। কিন্তু ওলি যদি তার জন্য অপেক্ষা করতে বলে তাহলে তার জন্য বিলম্ব করার অবকাশ রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রেও এ পরিমাণ বিলম্ব করার অবকাশ নেই, যার কারণে লাশের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার আশংকা হয়। এত অধিক বিলম্ব করা ওলি-গায়রে ওলি কারো জন্যই জায়েয নয়। আর দাফনে দীর্ঘ বিলম্বের উদ্দেশ্যে লাশের পরিবর্তন ও বিকৃতি রোধে লাশকে হিমাগারে রাখা, ফর্মালিন মেডিসিন ইত্যাদি পচনরোধক ঔষধ দিয়ে রাখা জায়েয নয়; বরং লাশের স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার পূর্বেই দাফন করে দেওয়া জরুরি। এর অধিক বিলম্ব করা গুনাহ। এছাড়া মৃতদেহকে হিমাগারে রাখা ফর্মালিন, মেডিসিন ইত্যাদি দিয়ে রাখা সম্মানপরিপন্থী ও কষ্টদায়ক। অথচ মৃত ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর মৃত্যুর পর কষ্ট দেওয়া তেমনই যেমন জীবিত অবস্থায় তাকে কষ্ট দেওয়া।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১১৯৯০
এ সংক্রান্ত হাদীস ও আছারের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, জীবিত ব্যক্তি যে সকল বস্তু দ্বারা আরাম বোধ করে মৃত ব্যক্তি তা দ্বারা আরাম বোধ করে। ইবনুল মালাক রাহ. বলেছেন, মৃত ব্যক্তি কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা কষ্ট পায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭০) তাই মৃত ব্যক্তিকে হিমাগারে রাখা মূলত তাকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর। এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
অনুরূপ লাশ জানাযা-দাফনের জন্য প্রস্তত হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক, রাজনৈতিক বা দলীয় প্রথা পালনের উদ্দেশ্যে লাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকান্ড করা যেমন, লাশকে স্থানে স্থানে নিয়ে প্রদর্শন করা, শ্রদ্ধা নিবেদন করা, পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, ভিডিও করা, লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে জীবনালোচনা করা, বিভিন্নমুখী ভাষণ-বক্তৃতা দেওয়া ইত্যাদি সবই গর্হিত। এগুলোর মধ্যে জীবিত মৃত কারোরই কোনো কল্যাণ নেই। এসব অনর্থক ও বেহুদা কর্মকান্ড পরহেয করা সকলের জন্য জরুরি।
সমাজের প্রতিটা মসজিদের খতীবদের জরুরি এ বিষয় নিয়ে জোরদার কথা বলা।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সমস্ত কুপ্রথা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক : সাবেক শিক্ষক।