• মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন

প্রবন্ধ: মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় রিডিং ও রাইটিং কর্নার স্থাপন : জিনিয়া জিন্নাত

admin / ৪০০ Time View
Update : সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

 

জিনিয়া জিন্নাত :

শিক্ষা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তবে শুধু শিক্ষা হলে হবে না, হতে হবে তা প্রকৃত সুশিক্ষা। একজন সুনাগরিকের মৌলিক শিক্ষা অর্জিত হয় তাঁর লব্ধ প্রাথমিক শিক্ষাকে ভিত্তি করে। আর প্রাথমিক শিক্ষা মানুষ অর্জন করে প্রথমে তাঁর পরিবার থেকে, তারপর নিজস্ব সমাজ থেকে, সর্বোপরি প্রাথমিক পাঠ্যালয় থেকে।

যদি তাঁর পরিবার ও পারিপার্শ্বিক সমাজ সুশিক্ষিত না হয়, তবে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে মৌলিক শিক্ষার ভিত গড়ার একমাত্র উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে প্রাথমিক পাঠ্যালয়/বিদ্যালয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন এবং বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ অবৈতনিক করেছেন। যা সুশিক্ষিত, দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ গঠনের জন্য সুদূরপ্রসারী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নত মান বজায় থাকলেই কেবল এই দূরদর্শী পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে।

একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই প্রতিটি এলাকা/গ্রাম/পাড়া/মহল্লায় গড়ে উঠেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখনো উন্নীত হতে পারেনি আন্তর্জাতিক মানের বা সমপর্যায়ের।

জেলা শহর, মফস্বল বা উপজেলা সদরের সন্নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মান তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও গ্রামের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান আশাব্যঞ্জক নয়। শহরের বা উপজেলা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত ভালো মানের শিক্ষক থাকলেও গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেমন রয়েছে শিক্ষক সংকট তেমনি রয়েছে তাঁদের শিক্ষার মান বা যোগ্যতার ঘাটতি। এছাড়াও গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী, ছাত্রীর তুলনায় ছাত্রের সংখ্যা কম এবং ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীও রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ, এসকল বাধা অতিক্রম করে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে গতিশীল করে উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর গ্রহণ করেছে বিশেষ কর্মসূচি।

এই কর্মসূচির মধ্যে উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর এর অন্যতম সৃজনশীল উদ্যোগ হলো কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকায় লেখা ও পড়ায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পাঠক্রমের অতিরিক্ত সময়ে রিডিং ও রাইটিং কর্নার চালু করে তাদের পড়তে শেখানো ও লিখতে শেখানো।

কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন অধিকাংশ শিশুরাই ছিল তাদের স্বাভাবিক পাঠ কার্যক্রমের বাইরে এবং পরপর দুই বছর অটো পাশের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একারণে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীদের যাচাই করে দেখা যায়, তারা ঠিকমতো সঠিক বানানে শব্দ বা বাক্য তৈরি করে লিখতে পারছেনা এবং সঠিকভাবে বানান করে শব্দ/বাক্য উচ্চারণ করে পড়তে পারছেনা। যা শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার পিছনে প্রধান অন্তরায়।
এ কারণেই উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিডিং ও রাইটিং কর্নার চালু করার যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অনেক বিদ্যালয়ে শ্রেনিকক্ষের সংকট থাকায় উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর এর উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ, জাইকা প্রকল্প ও ব্যক্তি পর্যায়ের অর্থায়নের মাধ্যমে যথাক্রমে ১৬টি, ৩টি ও ২টি করে সর্বমোট ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে নতুন শ্রেনিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। এসকল নতুন নির্মিত শ্রেণিকক্ষে চালু করা হয়েছে রিডিং ও রাইটিং কর্নার। ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের পরে লেখা ও পড়ায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের এই রিডিং ও রাইটিং কর্নারে শেখানো হচ্ছে লেখা ও পড়া। শিবপুর উপজেলার ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ কে নিয়ে মত বিনিময় সভার আয়োজন করে আনুষ্ঠানিকভাবে রিডিং ও রাইটিং কর্নার চালুর পাশাপাশি মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও, সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিগণ কে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে দেয়া হয়েছে সচেতনতামূলক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ।

সুশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। ২০৪১ সালের উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক গড়ার প্রত্যয়ে উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর এর নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পরিচর্যায় এগিয়ে যাচ্ছে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধ করে সকল সংকট মোকাবেলা করে এখন প্রাথমিক শিক্ষায় রোল মডেল হতে চায় শিবপুর উপজেলা। সে লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে শিবপুর উপজেলার উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন লেখা ও পড়ায় পিছিয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রিডিং ও রাইটিং কর্নার চালুকরণ হচ্ছে – উপজেলা প্রশাসন, শিবপুর এর একটি অনন্য সৃজনশীল উদ্যোগ!

নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ন্যায় সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন লেখা ও পড়ায় পিছিয়ে থাকায় এরকম রিডিং ও রাইটিং কর্নার স্থাপন করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা।

শিক্ষা হোক সবার জন্য, সুশিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি মহৎ প্রাণ। প্রাথমিক শিক্ষা হোক স্মার্ট আইসিটি নির্ভর সুশিক্ষা – এটা হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার। ( দৈনিক নবকণ্ঠ)

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিবপুর, নরসিংদী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category