সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্মৃতি নামের এক মহিলা মেম্বার মামলা করায় মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের প্রায় ৬৪ হাজার ভোটার দীর্ঘ আঠার বছর ধরে ভোট দিতে পারছে না। নির্বাচন কমিশনের তফসীল ঘোষণা অনুযায়ী গত ২০০৩ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।গত ৫ই জানুয়ারী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।কিন্তু মামলা নিষ্পতি না হওয়ায় গত ১৮ বছরের মধ্যে চারবার মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা করতে পারে নি নির্বাচন কমিশন।ফলে উপজেলার দুলালপুর,সাধারচর,পুটিয়া,যশোর,আয়ুবপুর, জয়নগর ও বাঘাব ইউনিয়নের ভোটাররা নির্বাচনী আমেজ উপভোগ করলেও ৬৪ হাজার ভোটারের ভাগ্যে জোটেনি নির্বাচনী আমেজ।এ ভাবে দীর্ঘ আঠার বছর ধরে মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের ভোটাররা তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, গত ২০২১ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী শিবপুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯ শত ১৫ জন।এর মধ্যে দুই ইউনিয়নেই রয়েছে ৬৩ হাজার ৫ শত ৭০ জন ভোটার।মাছিমপুর ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৭ শত ৪০ জন।যার মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ৫ শত ২ জন আর মহিলা ১৫ হাজার ২ শত ৩৮ জন ভোটার।পাশাপাশি চক্রধা ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ৩২ হাজার ৮ শত ৩০ জন।যার মধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৪ শত ৯ জন এবং মহিলার ১৬ হাজার ৪ শত ২১ জন ভোটার। দীর্ঘ সময় ধরে দুই ইউপি নির্বাচন না হওয়ায় ভোটাররা ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারছে না।ফলে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি সহ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চক্রধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচীব আলহাজ্ব আরিফ উল ইসলাম মৃধা।২০১৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের পদটি ছাড়তে হয় তাকে। ফলে চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেম্বার বেনুজির আহমেদ বেনু ।অপর দিকে ২০০৩ সাল থেকে অদ্যাবধি মাছিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হারিস রিকাবদার কালা মিয়া স্যার।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ততকালীন বিএনপির মহাসচীব, স্হানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মরহুম আব্দুল মানান ভূঁইয়া শিবপুর পৌরসভা ঘোষণা করেন।ঘোষণার পর মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের কিছু এলাকা নিয়ে পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ করা হয়।কিন্তু পৌরসভার সীমানা ঘোষণা করার পর মাছিমপুর ইউনিয়নের ৪,৫ও৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার স্মৃতি বেগম সীমানা সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ সময় মামলার শুনানী চলার পর গত জুন মাসে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয় ।কিন্তু মামলা নিষ্পতি হওয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।ফলে মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের ভোটারদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।তবে মাছিমপুর ইউনিয়নের অনেক ভোটার মনে করেন দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন না হওয়ায় মামলার ঝামেলা থেকে শান্তিতে আছেন তারা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংস্হার নির্বাহী পরিচালক মো: শামীম হাসান দৈনিক সকালের আলো’কে –দীর্ঘ সময় ধরে মাছিমপুর ও চক্রধা ইউপির নির্বাচন হচ্ছে না।ফলে ভোটাররা তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।শিবপুর পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে।তাই আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের তফসীল ঘোষণা করে ভোটারদের রাজনৈতিক অধিকার ভোট প্রয়োগের ব্যবস্হা করবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রশাসন সূত্র দৈনিক সকালের আলো’কে বলেন –চলতি বছরে মাছিমপুর ও চক্রধা ইউনিয়নের নির্বাচন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।কবে নাগাদ হতে পারে সে ব্যাপারেও আমাদের কাছে কোন তথ্য নাই। এখনো পর্যন্ত পৌরসভার ভোটার তালিকাই করা হয়নি।