বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য ♦নূরুদ্দীন দরজী
মাত্র তিনটি বর্ণের’ শিক্ষক, শব্দটি শুনা মাত্র আমাদের মনোজগতে ভেসে উঠে ভক্তি শ্রদ্ধায়, ন্যায় নিষ্ঠায়, আশা ভরসায়, জ্ঞান প্রজ্ঞায় এবং নির্ভরতার এক অন্তহীন ত্যাগের প্রতিচ্ছবি। অপার অনুগত্যের স্নেহ সিক্ত এ ছবি। যে শব্দ আমাদের ধমনীতে শ্রদ্ধার লহরী সৃষ্টি করে।
বলা হয়ে থাকে পেশাগত সম্মান বিবেচনায় শিক্ষকতা পেশার চেয়ে বড় আর কোন পেশা নেই। এ পেশা অবশ্যই সর্বজন শ্রদ্ধেয়।গশিক্ষকগণ মানুষের আত্মাকে জাগিয়ে তোলার কাজ করেন। তাঁরা মানুষকে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেন। জীবনকে প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে নেন। স্বপ্নের সারথী হয়ে বন্ধুর পথ চিনিয়ে দেন। হাত ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে যান শিক্ষকেরাই। শিক্ষকগণের শিক্ষা দ্বারা মানুষের মন পরিশীলিত হয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। আর সে মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজে বসবাস সুগম হয়। সেই আদিকাল থেকেই শিক্ষকগণ তা করে আসছেন।
আরো গভীর অর্থে যদি বলা হয়,”সূর্য যেমন দিবসে আলো বা কিরণ দিয়ে প্রাণশক্তি সঞ্চার করে থাকে,মেঘ যেমন বৃষ্টি দেয়,বাতাস যেমন ধরণীকে শীতলতা এনে দেয়, ফুল যেমন সবার জন্য সুভাস ছড়ায়-ঠিক তেমনি শিক্ষকগণ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন জ্বালিয়ে দেন তাঁদের শিষ্যদের মাঝে।
শিক্ষাগত পেশা একটি নবী ওয়ালা পেশা। অতীতে বিভিন্ন নবী রাসূলগণ মানব জাতির শিক্ষক হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এ পেশা ইবাদত তুল্য পেশা। শিক্ষকগণ তাঁদের ছাত্রদের বড় হওয়ার পথে পরিচালিত করেন।
শিক্ষা দানের যে ঋণ- সে ঋণ কোনদিনই কোন কিছুর বিনিময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হয়না বা পরিশোধ করে শেষ করা যায়না। এ পেশা সমাজের সকল পেশাকে তৈরি করে। আমাদের সমাজে, বিভিন্ন দেশে বা ইতিহাসের পাতায় শিক্ষকদের ভক্তি শ্রদ্ধার বহুবিধ কাহিনী শোনা যায়। ইসলামের ইতিহাসে এবং প্রাচীন মহাভারতে শিক্ষকগণের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে অনেক ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি- যার একটি বাদশাহ আলমগীরের শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান।
একজন শিক্ষকের প্রভাব কখনো শেষ হমনা- এমন কি অনন্তকালে ও নয়। তাঁদের আদর্শ গোটা মানব জাতির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত অতুল্য হয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিবর্তিত অবস্থায় কোন কোন শিক্ষককে অনেকটাই অপদস্থ আর অপমানিত হতে দেখা গেছে। কিছু পথভ্রষ্ট, নীতি নৈতিকতা বিবর্জিতদের দ্বারাই কেবল তা সম্ভব হমেছে। কোথাও বা নিজেরা ভুল বুঝতে পারায় আবার তার প্রতিকারের ব্যবস্থা ও করা হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ তো বটেই, কোন বিবেকবান মানুষই তা মেনে নেয়নি এবং সমর্থন করেননি। তবে দুই একটি ঘটনা হয়তো সে পরিস্থিতিকে আনুকূল্য দেখাতে পারে। যেখানে শিক্ষক নামীয় কারো নৈতিক স্খলন ঘটেছিলো যার প্রমাণ মাঝে মধ্যে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকি। শিক্ষক আছেন এবং থাকবেন সর্বকালে সবার ভক্তি শ্রদ্ধায়,থাকবেন সমগ্ৰ মানব জাতির আদর্শের মূর্ত প্রতীক বিশ্ব শিক্ষক দিবস হবে অনু স্মরণী এ কামনা করে শেষ করছি সংক্ষিপ্ত লেখাটি।
লেখকঃ কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার।