• মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

ভালো লাগা ও ভালোবাসায় ফুটবল

admin / ১১০১ Time View
Update : শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

নূরুদ্দীন দরজী

আমরা বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলা ভালোবাসি। ভালোবাসি ফুটবলকে। দেশের যে কোন অঞ্চলে খেলা হলে এলাকাটি উৎসবমুখর হয়ে উঠে। এলাকায় বেশকিছু দিন খেলার আমেজ বিরাজ করে। এক সময় আমাদের জাতীয় পর্যায়ের দুইটি দল আবাহনী স্পোটিং ক্লাব ও মোহামেডানের খেলা দেশের জন্য বিশেষ করে রাজধানীতে পক্ষ বিপক্ষ দলের সমর্থকদের মাঝে আনন্দ বন্যা বয়ে দিতো।

এ বছর/২০২২ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিশ্বকাপ ফুটবলের জমজমাট আসর। আমাদের দেশ ঐ খেলায় কোয়ালিফাই করেনি। তাই বলে বসে থাকিনি। বিশ্বের অন্যান্য সেরা সেরা দলগুলোকে আমরা সমর্থন করেছি। দিয়েছি জোরালো সমর্থন। আমাদের বেশির ভাগ সমর্থন ছিলো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পক্ষে। সমর্থন করতে করতে তাদের দলের অনেক খেলোয়ারকে আমরা ভালো ও বেসে ফেলেছি। অনেকের টপ সমর্থনে ও ভালোবাসায় ছিলো আর্জেন্টিনার ও মেসি ও ব্রাজিলের নেইমার । সারা রাতের ঘুমকে বিসর্জন দিয়ে গভীর রাত জেগে জেগে তাদের খেলা দেখেছি। পরাজয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে ও বিজয়ে বাঁধ না ভাঙা আনন্দে ফেটে পড়েছি। আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের পতাকা হাতে নিয়ে তাদের জার্সি গায়ে আনন্দ মিছিল করেছি। মেসি, নেইমারের পায়ে বল এলেই তাঁদের খেলার যাদুতে আমাদের মুগ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে বহদূর চলে গিয়েছি। সর্বশেষ ফাইনালে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলা দেখে দারুন ভাবে অভিভূত হয়েছি এবং প্রশংসা করেছি।
এক সময় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল আমাদের দেশ চিনতো না। কেউ আমাদের কথা তাদের বললে জিজ্ঞেস করতো,” Where is Bangladesh,? কিন্তু বর্তমান মিডিয়ার বদৌলতে তারা আমাদের পুরোপুরি চিনে ফেলেছে। আমাদের ভালো লাগা ও ভালোবাসার প্রতিদানে তাঁদের দেশে আমাদের পতাকা উড়িয়ে কৃতজ্ঞতা ও প্রকাশ করছে। আমরা যে ক্রিকেট খেলতে পারি তাও জেনে ফেলেছে। কিছু দিন আগে আমরা যখন টি২০ ম্যাচে ভারতকে পরাজিত করেছি তা জেনে তারা আনন্দ করেছে,নিজ দেশে বসে কড়তালি দিয়ে আমাদের টাইগারদের সমর্থন জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের বিবেচনায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন‌ই বিশ্বে তাঁদের যত সমর্থন আছে তার চেয়ে বেশি বিবেচিত হয়েছে। অর্থাৎ সমর্থনে আমরা টপে । ফাইনালে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার জনগণ ও তাঁদের রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁদের রাষ্ট্রপতি ও এর উত্তরে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমাদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর্জেন্টিনা আমাদের দেশে তাঁদের দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তাঁদের দেশে আমাদের বানিজ্য করার সুযোগ দেওয়ার ও প্রস্তাব করা হয়েছে। আমাদেরকে ভোজ্যতেল দেওয়ার কথা ও হয়েছে। সম্ভবত এবারের বিজিত কাপ আমাদের দেশে আনা হতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের দেশ থেকে কোচ এনে আমাদের ফুটবলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। শতভাগ প্রমাণিত হয়েছে- কোন ভালোবাসা কখনো বৃথা যায়না। তাঁদের পতাকা হাতে, জার্সি গায়ে আমরা খেলা দেখে আমাদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস, শ্লোগান, মিছিল আজ বন্ধুত্বে পরিনত হয়েছে। এমন বন্ধুত্বের কারণে দেশ ও বাঙালি জাতি সভ্য জাতির পরিচয় দিয়েছে। আমরা ধন্য হয়েছি।

তবে মনে রাখতে হবে বর্তমানে আমাদের ফুটবলের অবস্থা তেমন ভালো নয়। ফিফার রেংকিংয়ে আমাদের বর্তমান অবস্থান ১৯২তম যা কিছু দিন আগেও ছিলো ১৪৯তম। আবাহনী মোহামেডানের খেলার উত্তেজনা এখন আর পরিলক্ষিত হয় না। সে আসর আর জমে উঠে না। যদিও আমাদের মেয়েরা সাম্প্রতিক কালে ফুটবলে বাংলাদেশের জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আমরা মেয়েদের ফুটবলে এখন সাফ চ্যাম্পিয়ন। এর পর ও ফুটবলে আমাদের যে দৈন্যদশা আছে তা কাটিয়ে উঠে দেশকে নিয়ে যেতে হবে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল সহ বিশ্বমানের দলগুলোর সম পর্যায়ে। প্রমান করতে হবে আমাদের ভালো লাগা ও ভালোবাসা বিশ্ব ফুটবলের জন্য এবং আমাদের ফুটবলের জন্য। আমরা ও একদিন হবো বিশ্বের মডেল, আমাদের ও করতে হবে বিশ্ব জয়।
যে বিশ্বজয়ী খেলোয়াড় জীবনে ব্রাজিলের জন্য তিন তিনটি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। যিনি তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ জয় বিশ্বের সকল শিশুর জন্য উৎসর্গ করেছিলেন সদ্য প্রয়াত সেই ফুটবল সম্রাট পেলের কথা স্মরণ করে লেখাটি শেষ করছি।

লেখকঃ সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category