প্রীতি ও পরিণয়
ছাব্বির ভূইয়া
বর্তমানে স্বেচ্ছাচারিতা থাকলে একজন পুরুষ ৫জন মেয়ে বন্ধু বানাতে পারে। তা সম্ভবও বটে। আবার একজন মেয়েও চাইলেই ৫জন ছেলে বন্ধু বানাতে পারে।আমি পুরুষ বলে পক্ষপাতিত্ব করব না। যা বাস্তব তাই বলছি,আমাদের জনজীবনে আমরা একটা সময়ে প্রিয়জনের বিশেষ আকুলতা অনুভব করি। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়, কেউ একক আবার কেউ বহু প্রতি। এখন স্বেচ্ছায় হাত বাড়ালেই ভালোবাসা পাওয়া যাচ্ছে। এই যুগে প্রেম ভালোবাসা আলু-পটলের মতো সহজলভ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে।ফলে ভালোবাসা যত্রতত্র রয়ে যাচ্ছে, তারতম্য খুব একটা লক্ষনীয় নয়। আবেগের বশিভূত হয়ে প্রেমলীলার অন্ধ মোহে পড়ে বিবেক এবং ব্যাক্তিত্বকে বিসর্জন দিচ্ছে।এতে করে সম্ভ্রান্ত বংশীয়, সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মানো কিশোর কিশোরীরা অচিন্তনীয় ভাবেই অন্ধ মোহের তমসায় পাঁ বাড়ায়। এতে করে সমাজ,পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনে চলে আসে অসারতা। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছিটকে যাচ্ছে তাদের তপস্যা হতে। সমাজের নির্দিষ্ট একশ্রেণির কিশোর এবং কিশোরী রয়েছে যাদের লক্ষ বস্তুতে পরিনত হয় মেধাবী ও ধনীর দুলালেরা। তারা চিন্তা করে যারা সম্ভ্রান্ত তাদের কাবু করতে পারলে বাকি জীবন সোনায় সোহাগা থাকতে পারবে।বর্তমানে দুশ্চরিত্রের কিশোর কিশোরীরা সফলও হচ্ছে। তাদের স্বীকার হওয়া ছেলেমেয়েরা চিন্তা করার মতোও লেশ মাত্র ক্ষণ তাদের থাকেনা।ফলে পরিবার সামাজিকভাবে হেয় ও একঘরে হয়ে যায়।বর্তমানে লক্ষ্যনীয় ভাবে সম্পর্ক গুলোতে উভয়েই প্রতারিত হচ্ছে, এমন সংবাদ পত্র-পত্রিকার নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনার মতোই ঘটমান। যেখানে এক পক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে, অপর পক্ষ আবেগের ফায়দা লুটে নিয়ে বিভিন্ন গোপন তথ্যাদি হাতিয়ে ব্লাকমেইল করে নিঃস্ব করে, সর্বশেষ উপায়ন্তর হয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।অনেকে পারিবারের বাহিরে গিয়ে সংসার করে। সেখানে ব্যক্তির ভালোবাসা পূর্ণতা পেলেও তাদের প্রতি পরিবারের রয়ে যাও লানত ঠিকই বয়ে বেড়াতে হয়।তারা সফল হতে পারলেও সুখী হতে পারেনা।সফলতা কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আসে আর সুখ সর্বময় সন্তুষ্টি ও আত্মতুষ্টির মধ্যে নিহিত থাকে।অবৈধ ভালোবাসায় মোহ ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা।মোহটা কেটে গেলে পরস্পর বিচ্ছেদের জন্য অধীর হয়ে ওঠে।কারন ভালোবাসার রঙ বদলায়, যেমনটা: সুবর্ণা মুস্তফার সাথে একবার হুমায়ুন ফরিদীর প্রচণ্ড ঝগড়া হলো, রাগ করে সুবর্ণা অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পড়লেন। সুবর্ণা সকালে উঠে দরজা খুলে দেখেন, যেই রুমে ঝগড়া হয়েছিল, সেই রুমের মেঝে থেকে ছাদের দেয়াল পর্যন্ত একটি কথাই লিখে পুরো রুমকে ভরে ফেলা হয়েছে, কথাটি হল- ‘সুবর্ণা, আমি তোমাকে ভালোবাসি’|এতো ভালোবাসাও তাদের বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেনি, ২০০৮ সালে ডিভোর্স হয়।
জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন-
‘প্রেম ধীরে মুছে যায়; নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।’ এই জীবনানন্দকে একবার দেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে লাবণ্যপ্রভা। সাহিত্যের ছায়া থেকে একশ হাত সেও ক্ষণকাল পরে টের পায় তার স্বাধীনতা হারিয়ে যাচ্ছে। মুক্তির জন্য পায়তারা করতে থাকে। দুর্বিষহ হয়ে উঠে উভয়ের জীবন গুলতেকিন নামের ক্লাস টেনের সেই কিশোরী হুমায়ুনের প্রেমে অন্ধ হয়ে বিয়ে করে ফেলে।বিয়ের পরে সে জানতে পারে যে লেখক হুমায়ুন আহমেদ মানুষ হিসেবে খুবই সাধারণ। বাস্তব জীবনে সে চাঁদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে না। তার মধ্যে আলাদা কিছু নেই। সে আর দশটা মানুষের মতোই সাধারণ।
গুলতেকিন বারবার বলতো-হুমায়ন আহমেদকে ‘তোমার লেখাই ভালো, অন্যকিছু ভালো না।’ নন্দিতা রায়ের ‘বেলাশেষে’ সিনেমায় এই কঠিন ব্যাপারটা খুব সহজভাবে বুঝানো হয়েছে- ‘হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ, সারাজীবন বইতে পারাটা কঠিন।আসলে প্রেম ভালবাসার সহজলভ্যতার এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিরল দুটি জিনিস-
“মনের মানুষ” এবং “মানুষের মন”।
এই দু’টোর উপর বিশ্বাস থাকা ভাল এবং উচিতও বটে। তবে সেটা কেবলই নিজের মধ্যে। এগুলো নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী বড়াই দেখানোও উচিত নয়।কারণ হাওয়ার দিক পরিবর্তিত হয়ে কখন কোনদিকে বয়ে যায় সেটা সর্বদাই অনিশ্চিত। হোক সেটা প্রকৃতির হাওয়া অথবা মনের।
দিন শেষে কে কতোটুকু সফল? সংসারেও আবদ্ধ থেকেও আজ অনেক নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত কারন সেখানে তারা তাদের চাহিদা অনুসারে প্রাপ্ততার প্রাপ্তি সাধন করতে পারছেনা। ফলে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়, হচ্ছেও। দিন শেষে ভালবাসাটা ও ভালোবাসার মানুষ স্বাধীনতাকামনা করে।কেননা ভালোবাসা সার্বজনীন নয়। সবাই ভালবাসা যেখানে পায় সেখানেই ছুটে যায়। ফলে কেউ সংসার ত্যাগ করে কেউ পরিজন। কিন্তু কতোক্ষণব্যাপী?যে যাই করুক সবাই ব্যাক্তি স্বার্থের জন্যই করে। তুচ্ছ স্বার্থের জন্য জলাঞ্জলি দেয় অমূল্য রত্ন। দিন শেষে প্রকৃতি বলে একটা শব্দ রয়েছে। প্রকৃতি সাময়িক নিস্তার দিলেও নির্দিষ্ট সময় পর অভিশাপ, পাপ ও প্রতারণার প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করিয়েই ছাড়বে। প্রকৃতি নিরব, যা হবে নিবৃত্তেই। যাই করুন ভেবে চিন্তে করুন। পাপের প্রাশ্চিত্তের আগুন যেন যুগান্তরে পোহাতে না হয়।