মো: লুৎফর রহমান :
কবিগুরু( ১৮৬১-১৯৪১) কাব্য চর্চার পাশা পাশি বিভন্নমুখী সামাজিক কর্মকান্ডে সশরীরে অবস্থান করেছেন। দীর্ঘ ৮০ বৎসরের ঘূর্ণাবর্তে ভারত বর্ষের রাজনীতি,অর্থনীতি,শিক্ষা-সমাজ তার চেতনার আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে।তাঁর সমস্ত চিন্তা কর্মের মুল লক্ষ্য ছিল মানব কল্যান। শিক্ষার প্রতি ভালবাসার টানেই তিনি অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।একজন সক্রিয় কর্মীর দায়িত্ব পালন করেছেন শিক্ষা ক্ষেত্রে।শিক্ষা বিষয়ক তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ” শিক্ষার হের ফের যা ১৯২১সালের সাধনা সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এভাবে বিরতিহীন ভাবে প্রায় অর্ধশত প্রবন্ধ ও গ্রন্থ শিক্ষা বিষয়ে রচনা করেছেন। কবি গুরু প্রচলিত শিক্ষার ত্রুটিকে চিহিৃত করেন এবং মাতৃভাষার সর্ব্বোচ্চ ব্যবহারের গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয় পাশ্চাত্য জ্ঞানের আলোকে দেশকে দেখতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্মচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ১৯০১সালে, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১৮সালে, শান্তি নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১২ সালে। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা সুত্র বিদ্যালয়। শুধু স্কুল নামক যন্ত্রের ভিতর দিয়ে মানব শিশুর বিকাশ সম্ভব নয়। তাই কবি গুরু আশ্রম শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।বর্তমান কিন্ডারগার্টেন আশ্রম শিক্ষার চমৎকার বিকল্প হতে পারতো।কিন্তুু তা না হয়ে এগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধরার কলে পরিনত হয়েছে।সবই ব্যবসায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে পরিনত হয়েছে। বইয়ের ভার, ক্লাশ ভর্তি পরিক্ষাভীতি, শিশুদের মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে। রবীন্দ্রনাথ সেটা চাননি।খাঁচায় বন্ধী শিশুর বিকাশ হয় না।
কবি গুরুর কিছু উদ্ধতি দেয়া যাকঃ বিদ্যা বিস্তারে কথাটা যখন ঠিকমত মন দিয়া দেখি তখন তার সর্ব প্রধান বাধাটা এই দেখিতে পাই যে তার বাহনটা ইংরেজী।”আমরা ভরসা করিয়া এ পর্যন্ত বলিতেই পারিলাম না যে, বাংলা ভাষাতেই আমরা উচ্চ শিক্ষা দিব এবং দেওয়া যায় এবং তবেই বিদ্যার সফলতা দেশ জুড়িয়া ফলপ্রসু হবে এবং দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হলে মানুষের অধিকার সচেতন হতে হবে। মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও মুক্তির জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা জ্ঞান চর্চা ছাড়া সম্ভব নয়। অধিকার আদায়ের চেতনা জাগ্রত না হলে ছয়টি মৌলিক অধিকার যথা অন্ন,বস্ত্র , শিক্ষা, স্বাস্থ্য , কর্মসংস্থান ও বিনোদন সম্ভব নয়। কিন্তুু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় আধুনিক নয়, চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখন ও আমরা যেতে পারিনি।Nature অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। দুঃখের বিষয় আমরা একটি সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ও চালু করতে পারলাম না। একটি দেশের উন্নয়নের সুচক এখন জি,ডি,পি। অথচ অর্থনৈতিক,সামাজিক,সংস্কৃতি,
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ,ইতিহাস,ঐতিহ্য সব মিলিয়েই এখন উন্নয়ন। উন্নয়ন এখন মাল্টি এনালাইসিস।
রবীন্দ্রনাথ সব সময়ই বহুমুখী ভাবনাকে একত্রিত করেছেন, শিক্ষার সার্থে তিনি সামাজিক মানবিক ঐক্যের কথা ও বলেছেন। এমনটা না হলে বড় অর্জন সম্ভব নয়। মানুষের অন্তরের সংযোগ সাধন করাই রবীন্দ্র চিন্তার বৈশিষ্ট্য । তবে এ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার বার তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহনের পরার্মশ দেন।রবীন্দ্রনাথের শুধু নন্দন তত্ত্বের মধ্যে আমাদের সীমাবদ্ধ না থেকে তার বহুমুখী অবদান সম্পর্কে গবেষনা করা উচিৎ।
পৃথিবী এখন Global Village এ পরিনত হয়েছে।ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে কিন্তুু রবীন্দ্রনাথ থেকে শিক্ষা বিষয়ে এখনও অনেক শিক্ষনীয় রয়েছে। যার প্রয়োগে আমরা শিক্ষাকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় রুপ দিতে পারি।
লেখক::: সহকারী অধ্যাপক, রোকন উদ্দিন মোল্লা গার্লস কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ.
সম্পাদনায়:: বেলাল আহমেদ, বিভাগীয় সম্পাদক, শিক্ষা সম্পর্কিত পাতা, মোবাইল : ০১৬৮৫৫৪৯৮০০