• মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

শনিবারের শিক্ষা সম্পর্কিত পাতা::: ইলেকট্রনিক ক্রমবিকাশ, প্রাথমিক পাঠ ও স্বনির্ভরতা

admin / ২০১ Time View
Update : শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩

 

১৯০৪ সালে বিজ্ঞানী ফ্লেমিং-এর বায়ুশূন্য ডায়োড আবিষ্কার ইলেক্ট্রনিক্সের জন্মলগ্ন| এরপর জার্মেনিয়াম আর সিলিকনের হাত ধরে ১৯৪৭ সাল নাগাদ বায়ুশূন্য ইলেকট্রনিক্স থেকে কঠিন অবস্থার ইলেক্ট্রনিক্সে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে ইলেক্ট্রনিক্সের এক নতুন যুগের সূচনা হয়, যা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট টেকনোলজির মাধ্যমে অনেকটাই পরিণতি লাভ করে আরো প্রায় ১৫ বছর পর| এই সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য বিজ্ঞানীর অবদান অনস্বীকার্য| এখনো নিরন্তর ইলেক্ট্রনিক্সের উন্নতি হয়েই চলেছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন আরো বেশি করে ইলেকট্রনিক্স নির্ভর হয়ে পরছে| সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিকেই যদি উদাহরণ করা যায় তবে আমরা কি কি ইলেকট্রনিক প্রয়োগের কথা প্রতিনিয়ত শুনেছি একটু দেখে নেই: বাড়িতে পালস অক্সিমিটার, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর, অফিসে স্যানিটাইজার-ডিস্পেন্সার, ইলেকট্রনিক জুতো বীজাণুমুক্তকারক, অবলোহিত তাপীয় স্ক্যানার, বাড়ি এবং অফিস উভয় জায়গাতেই অতিবেগুনি বীজাণুমুক্তকারক এবং অবশ্যই হাসপাতালে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট আর ভেন্টিলেটর| এর মধ্যে কিছু ইলেকট্রনিক প্রয়োগ পুরোনো কিন্তু মোবাইল, মানিব্যাগ, হাত ঘড়ি, দৈনন্দিন সবজি, মুদিখানা সংক্রান্ত পণ্যকে সম্ভাব্য করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত করার জন্য তৈরি অতিবেগুনি বীজাণুমুক্তকারক প্রকোষ্ঠ, জুতো বীজাণুমুক্তকারক বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা নির্মিত করোনা আক্রান্ত অনুসন্ধানকারী ড্রোন এগুলো সবই অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কার| বর্তমানে সর্বজনের চাহিদা ও সামাজিক প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সিংহভাগই যে ইলেকট্রনিক্সভিত্তিক একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা| ইলেকট্রনিক্স-এর বহুবিধ আবিষ্কার এই বিষয়টির অতীব প্রায়োগিক ক্ষমতার সাক্ষ্য বহন করে| বর্তমান যুগে ইলেকট্রনিক্স ছাড়া আমরা এক পা ও চলতে পারিনা| এটি একটি প্রয়োগমূলক বিষয় বলে এর ব্যাপ্তি সীমাহীন| একদম প্রাথমিক স্তরের বর্তনী থেকে শুরু করে বর্তমানের ন্যানোটেকনোলজি (কার্বন ন্যানোটিউব ও কোয়ান্টাম ডট), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই সব কিছুই অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিকসের প্রয়োগ ছাড়া আর কিছুই নয়| বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের হাত ধরে দিনকে দিন নতুন নতুন ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ও গ্যাজেট আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও বিনোদন ক্রমশ বেড়েই চলেছে এবং সেই সংক্রান্ত খরচও মধ্যবিত্তের নাগালে চলে এসেছে|

বিদ্যালয়ের যেসকল ছাত্রছাত্রী স্নাতকস্তরে ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বা কারিগরি ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চাও ইলেকট্রনিক বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে তাদের বলবো তোমরা নিজের চেষ্টাতেই বেশ কিছুটা ব্যবহারিক ইলেকট্রনিক্স শিখে ফেলতে পারো| ইলেক্ট্রনিক্সকে ভালোবাসলে এবং ভবিষ্যতে এই বিষয়কেই আঁকড়ে ধরতে চাইলে প্রাথমিক পাঠ অবশ্যই জরুরি| ইলেক্ট্রনিক্সে বহুল ব্যবহৃত বর্তনীর উপাদানগুলি যেমন রোধ, ধারক, ডায়োড, ট্রানসিস্টর এগুলির কার্যকারিতা ও বিবিধ ধর্মগুলি শুরুতেই জেনে রাখাটা জরুরি| তোমরা তোমাদের পদার্থবিদ্যা পাঠ্যপুস্তকের প্রবাহী তড়িৎ, তড়িৎ-চুম্বকত্ব, তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশ, আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্তর্গত অর্ধপরিবাহী সংক্রান্ত বিষয়গুলি একবার ঝালিয়ে নাও| যারা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার বিজ্ঞান বা পদার্থবিদ্যা ও গণিত পড়ছো তাদের বলবো তোমরা পাইথন এবং ভি.এল.এস.আই. প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার চেষ্টা করো| ইলেকট্রনিক্স-এর বিবিধ প্রয়োগ পাইথন প্রোগ্রামিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়| অপরদিকে সেমিকন্ডাক্টর আই.সি. ফ্যাব্রিকেশন করতে গেলে ভি.এল.এস.আই.-এর উপর দখল থাকা আবশ্যিক| অধিকতর আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা ইলেকট্রনিক সেন্সর, আরডুইনো এবং মোবাইল এপ্লিকেশন নিয়েও প্রশিক্ষণ নিতে পারে| আবার যারা স্নাতকস্তরের চূড়ান্তবর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের জন্য বিবিধ শিক্ষামূলক অনলাইন পাঠ্যক্রম ও মোবাইল প্রয়োগ-এর প্রস্তুতি ও তাদের রক্ষণাবেক্ষন একটি পেশা হিসাবে উঠে আসতেই পারে| হাতেকলমে ইলেকট্রনিক্স-এর ধারণার সাথে নিজের কল্পনাশক্তি ও প্রয়োগ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বিবিধ ইলেকট্রনিক প্রকল্প তৈরী করা সম্ভব|

আবার যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শিল্পগুন্ ও সৃষ্টিশীলতা রয়েছে তারা বাড়ির পুরোনো ও বাতিল ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশকে কাজে লাগিয়ে বিবিধ শিল্পদ্রব্যাদিও প্রস্তুত করতে পারে| এই ধরণের বাতিল ইলেকট্রনিক দ্রব্য নির্মিত ঘর সাজানোর সামগ্রী ও এল.ই.ডি. শিল্প দ্রব্যাদি বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে একটা স্বনির্ভরতার জায়গা তৈরী করা সম্ভব| ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি পেশাদাররা, যাঁরা ইলেকট্রনিক্স চর্চা করতে ভালোবাসেন তাঁরাও এই ধরণের পেশার সাথে যুক্ত হতে পারেন|

লেখক :: ডঃ প্রিয়দর্শী মজুমদার,  অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগ, বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ; উপদেষ্টা, বিদ্যাবাড়ি সংগঠন, মাধবদী, নরসিংদী, বাংলাদেশ.

সন্দীপ দে, অধ্যাপক, ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগ, বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ|

সম্পাদনায়:: বেলাল আহমেদ, বিভাগীয় সম্পাদক, শিক্ষা সম্পর্কিত পাতা, মোবাইল : ০১৬৮৫৫৪৯৮০০


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category