ঝড়ে পড়া(Drop out) :: প্রফেসর ড.শেখ আবুল হোসেন
ঝরে পড়ে বললে সাধারনত আমরা বুঝি যে, গাছ থেকে পাতা ঝড়ে পড়ে। আবার গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে।তবে আমি আপনাদের সাথে জীবন থেকে ঝরে পড়া নয় কিন্তু জীবনের উন্নতির সোপান থেকে ঝরে পড়া অর্থাৎ
শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া যেমন স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া নিয়ে আলোচনা করব।প্রথমে প্রাথমিক স্কুল থেকে ছেলে মেয়েদের ঝরে পড়া কথা উল্লেখ করছি। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিভিন্ন কারনে ছেলে মেয়েরা ঝরে পড়ে।এই স্তরটি শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে মূলবান স্তর।দারিদ্র্যতা একটি অন্যতম কারণ,এই কারনে সংসার জীবনে অভাব হানা দিলে উপায় অন্তর না পেয়ে,অনেকে স্কুলের গন্ডি পাড় করে আবার কারো স্কুলের যাওয়া সময়ই হয় না।তবে আগের দিনে স্কুলে যাওয়ার মন মানষিকতা বাবা,মা,ও ছেলে, মেয়েদের কম ছিল।কিন্তু এখন অনেকটা বেড়েছে।কারন আধুনিকতার ছোয়া এবং স্কুল গুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করা,উন্নত অবকাঠামো এত কিছুর পড়েও ঝড়ে পড়ার হার কম নয়।শৈশব কালেই অনেকেই বাবা,মা হারায় তখন সংসারে উপার্জন করার কেউ না থাকলে বেছে নেয় কাজ।বিশেষ করে আগের দিন গুলোতে বাসাবাড়ির কাজ,দোকানে কাজ,চায়ের দোকানে কাজ করত কিন্তু এখন দিন কি দিন শিশুরা ঝুকিপূর্ন কাজ বেছে নিচ্ছে যেমন ওয়ার্কসপ,কলকারখানা, গাড়ীর গ্যারেজ,রিক্সার গ্যারেজ,রিক্সা চালানো,অটো চালানোর পথ বেছে নেয়।কারন বেশী উপার্জনের আশায় এবং সংসারের হাল ধরার কাজে।যদিও আজকের দিনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ, কে শুনে কার কথা আইনের ফাক ফোকর দেখিয়ে শিশুশ্রম চলছে বিশাল তবিয়তে।প্রাইমারি স্তরকে আমাদের দেশে সরকার ও জনগন অবহেলা করে।উন্নত দেশে উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হয়।আমাদের দেশে উচ্চ ডিগ্রি ধারী লোকজন প্রাইমারীতে আসতে চায় না।এটা একটি বড় বাধা।অনেক চড়াও উৎড়াই পাড় করে মাধ্যমিকে পৌছায়। তারপর শুরু হয় মেয়েদের জীবনে ইভটিজিং এবং সমাজের কিছু লোক বলতে শুরু করে মেয়েদের এত পড়াশুনা কিসের, বিয়ে দিয়ে দাও এতে অনেক মেয়ে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে।শুধু তাই নয় দাদা,দাদী ও নানা, নানিদের মনে ইচ্ছা জাগে যদি নাতি,নাতনীর মুখ দেখে মরতে পারতাম তাহলে মরেও জীবনটা
ধন্য মনে হত।এতে অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে।এই সময়টায় দারিদ্র্যতার কারনে ছেলেদের জীবনে নেমে আসে ঝরে পড়ার আশংকা।তবে এই সময়টা মাদক,সংঘদোষ কম দায়ী নয়।শিক্ষার অভাবে বাবা মা মনে করে আমি শিক্ষত হতে পারিনি ছেলে মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে কি করবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না করতেই সংসারের উপার্জনের চিন্তা, বাবা-মার চিন্তা ভাই বোনদের বিয়ে নিয়ে চিন্তা ইত্যাদি কারণে শিক্ষা জীবন থেকে অনেকেই ঝরে পড়ে।আবার এটাও শুনায় যায় যে, আমরা পড়াশুনা করে চাকুরী পেলাম না, তোমরা এত পড়াশুনা করে কি করবে?।অনেক চড়াই উৎড়াই পার করে উচ্চ শিক্ষা আর করা হয় না।কারণ অল্প পড়াশুনা করে ব্যবসা করে অনেক টাকা ইনকাম করে।শুধু তাই নয় ইন্টার পাশ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলে আমাদের দেশে যে মর্যাদা পাওয়া যায়। এম,এ পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেও সেই সুনাম পাওয়া দূরহ হয়ে পড়ে। কারন আমাদের সমাজ ব্যবস্হা কারি কারি টাকা আপনি যে চাকুরী করেই উপার্জন করেন অসুবিধা নেই।আজকে সরকারী অনেক চাকুরী জীবি আছে ৭০/৮০ হাজার টাকা বেতন দিলেও তাদের সংসার চলে না। যাহোক এই ঝড়ে পড়া রোধকল্পে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে পারেনা। শিক্ষাই পারে কেবল একটি সমাজ তথা একজন সুনাগরিক গড়ে তুলতে।
সম্পাদনায়:: বেলাল আহমেদ, বিভাগীয় সম্পাদক, শিক্ষা সম্পর্কিত পাতা, মোবাইল : ০১৬৮৫৫৪৯৮০০