• শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন

শিবপুরে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবীতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তালা, মহাসড়ক অবরোধ

admin / ৬৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

মো: আসাদুজ্জামান আসাদ:

নরসিংদীর শিবপুরে সৈয়দনগর আতোয়ার রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানের অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের
সকল শ্রেণী কক্ষে তালা দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন জানান বুধবার (০২ অক্টোবর) বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষসহ সকল শ্রেণী কক্ষ তালাবদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা, অফিসে ঢুকতে না পেরে বাইরে বসে থাকেন শিক্ষকরা। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষকের দ্রুত অপসারণ চেয়ে বিদ্যালয়ের দেয়ালে পোস্টার ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া একই দাবীতে ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় মহাসড়কের দুইপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে দূরপাল্লার যানবাহনে থাকা যাত্রীরা। খবর পেয়ে সহকারী শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে দুই ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মহাসড়ক ছেড়ে বিদ্যালয়ে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। এরপর দুইঘন্টা অতিবাহিত হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করতে থাকে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে দফায় দফায় আলোচনা করেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। পরে বিকেলে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ মো: সজীব ও শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যায়।

বিক্ষোভ চলাকালীন সময় প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেননা। ইউএনওর নিকট অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে আসেননা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষক ও ৫জন কর্মচারীসহ মোট ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের সভাপতি শাহ মোঃ সজীবের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।লিখিত অভিযোগে জানা যায় প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান ০১/০১/১৬ তারিখে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তিনি একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। তিনি অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ১০৪৮৫৫৯/-( দশ লক্ষ আটচল্লিশ হাজার পাঁচশত উনষাট টাকা আত্মসাৎ করেন। ইউএনওর নিকট অভিযোগ দেওয়ার পূর্বে বিষয়টি গত ১৯/০৭/২৪ তারিখে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল কবির শাহিদ, পুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার হাসান উল হক সানি এলিছ, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক কর্মচারী ও কমিটির সকল সদস্য নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিক্ষকদের ছয় মাসের বকেয়া বেতন প্রদানসহ বাকী টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়।সে মতে প্রধান শিক্ষক গত ০৮/০৮/২৪ ও ২০/০৮/২৪ তারিখ দুই কিস্তিতে শিক্ষকদের ছয় মাসের বকেয়া বেতন আড়াই লক্ষ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তার অবস্থান পরিবর্তন করে স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে শিক্ষকদের তার অফিসে ডেকে এনে বিভিন্নভাবে হুমকি ,ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হেনস্তা করতে থাকেন। ফলে শিক্ষক ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে খোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে।এরই জের ধরে গত ২৩ /০৯/২৪ তারিখে ইউএনও বরাবর শিক্ষক কর্মচারীগন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবর তিনটি অভিযোগ দিয়েছেন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনাস খান জানান আমাদের এক দফা এক দাবী দুর্নীতি পরায়ন প্রধান শিক্ষকের অপসারণ। সহকারী শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম জানান আমরা আজকে বুধবার বিদ্যালয়ে এসে দেখি অফিস ও সকল শ্রেণি কক্ষে তালা। আমরা সকল শিক্ষক মাঠে বসে থাকি। ছাত্রদের এক দফা দাবি প্রধান শিক্ষকের অপসারণ। আমরা ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারীগন প্রধান শিক্ষককের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হেনস্তা প্রতিবাদে সভাপতি ও ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।আমাদেরও এক দফা দাবি প্রধান শিক্ষকের অপসারণ। এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আলতাফ হোসেন জানান ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ হয়েছে। স্যার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছেন। শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: সজীব বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকও কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category