♦নূরুদ্দীন দরজী♦
প্রতি বছরই বাঙালি জাতির মহান বিজয় দিবস ফিরে আসে। কোটি কোটি বাঙালি কন্ঠে ধ্বনিত হয় আমাদের বিজয় গাথা। রক্তের বন্যায় ভেসে আমরা দাঁড়িয়ে আছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। এ স্বাধীনতা ও বিজয় যাঁরা এনে দিয়েছে তাঁরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রথমেই অভিবাদন জানাই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের। বিনম্র অভিবাদন জানাই ত্রিশ লাখ শহীদ গণে।
পৃথিবীতে মানব জাতির আগমন হতেই জীবন সংগ্রাম, শক্তিমত্তা প্রয়োগ করে বাঁচতে হয়েছে। যুদ্ধ করতে হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যুদ্ধ কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। একটি যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি মানুষকে অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হয়। তার পর ও অপশক্তি, পেশীশক্তি, যথেচ্ছ ক্ষমতার ব্যবহার,সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অত্যাচার নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে মানুষকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয়।, দীর্ঘ দিনের বঞ্চিত জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
নূরুদ্দীন দরজী
বাঙালি পৃথিবীর একটি সেরা জাতি। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা ও ঐশ্বর্যে ভরা দেশ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের উপর লোলুপ দৃষ্টি ফেলে অনেক বেনিয়ার দল। সেন, পাল, পাঠান ও মোঘল থেকে শুরু করে ডাচ, পর্তুগীজ ও ইংরেজরা বাংলাকে পদানত করেছে বার বার। ইংরেজরা প্রায় দুশো বছর শোষণ নির্যাতন করার পর আসে জগদ্দল পাথর হয়ে পাকিস্তানরা। ২৩ বছর শোষন করে আমাদের হাড্ডি মাজ্জা ভেঙ্গে দেয়। আমরা হতে থাকি গরীব থেকে নিঃস্ব।
এ অত্যাচার ও জুলুম থেকে রক্ষার জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আমাদের চূড়ান্ত যুদ্ধে নামতে হয়। এ যুদ্ধ ছিলো একটি অগ্নিপরীক্ষা। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ । হাজারো বছরে এমন পরীক্ষা ও সংকটময় সময় পূর্বে আর আসেনি বাঙালির জীবনে। সমগ্ৰ বাঙালি হানাদারদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়। যার যা কিছু ছিলো তা নিয়ে হানাদারদের মোকাবেলা করে। যুদ্ধ চলে দীর্ঘ নয় মাস। ত্রিশ লক্ষ বাঙালি শহীদ হয়। দুই লক্ষ সম্মানিত মা, বোন তাদের মহা মূল্যবান সভ্রম হারান। বাংলার সম্পদ হানি হয় প্রচুর। রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালর্ভাট, মিল ফ্যাক্টরী বিনষ্ট হয়ে যায়।
ওই ঘাটতি মিটিয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ চেষ্টা করে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরে আসায় শুরু হয় উন্নয়নের পথ চলা। এ পথে সাম্য, ভাতৃত্ব,একতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধমে উন্নতির চরম শিখরে পৌছবো প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছি আমরা।
আবারো দেশের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। মা বোনদের জন্য সমবেদনা জানাই। একই সাথে সারা দেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, জীবন বাজী রেখে নরসিংদী ও শিবপুরে যারা আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। শিবপুরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূইঁয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এ ছাড়া ও বেদন মৃধা, ফটিক মাসটার ও তাজুল ইসলাম খান ঝিনুকসহ অন্যান্যদেরকে গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি।
লেখক : কলামিস্ট, উপদেষ্টা শিবপুরের আলো ২৪ ডট কম, সাবেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।